চাকরির বাজারে ধস, নিয়োগ স্থবির

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে বেসরকারি খাতের চাকরির বাজারে ধস নেমেছে। বিশেষ কিছু পদের বাইরে প্রায় সব ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৭০ শতাংশ জনবল নিয়োগ বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জনবল নিয়োগে সহায়তাকারী সংস্থাগুলো। মহামারি কিছুটা কমে গেলে ছোট-বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করলেও পরিস্থিতি আবার অবনতির দিকে যাওয়ায় তা থমকে গেছে বলে জানিয়েছেন এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলরা।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষিত বেকার সঙ্কট দীর্ঘদিনের। করোনার কারণে সেটি আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। দেশের উন্নয়নে পর্যাপ্ত বেসরকারি চাকরির বাজার তৈরি করতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরিতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে চাকরির সুযোগ তৈরি করলে এ সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

দেশে অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছেন। এটি আগে থেকে ছিল, করোনা পরিস্থিতিতে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা বাড়তে থাকলে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের মার্চ মাসে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর থেকে সরকার বিভিন্ন ধাপে লকডাউন ও পরে নানা ধরনের বিধিনিষেধ জারি করে। বর্তমানেও সেটি বহাল রয়েছে। এসব বিধিনিষেধের কারণে অনেক মানুষ এখনো ঘরবন্দি। বিশেষ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জনবল নিয়োগ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রার্থীর দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ এবং সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বিডিজবসডটকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে এম ফাহিম মাশরুর জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছরের মার্চ-এপ্রিল করোনা মহামারির প্রথম ঢেউ শুরু হওয়ার পর বেসরকারি খাতে ৬০ থকে ৭০ শতাংশ জনবল নিয়োগ কমে যায়। পাঁচ থেকে ছয় মাস এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকার পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে বেসরকারি কিছু প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হতে থাকে। বর্তমানে সেটি আবার আগের মতো শুরু হচ্ছে।’

বিডিজবসের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা, সেলসম্যানসহ বিশেষ কিছু জরুরিসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে সব চেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ হলেও করোনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ খাতে তেমন জনবল নিয়োগ হচ্ছে না। বর্তমানে বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসতে শুরু করেছে।’

অলজবসডটকমের মার্কেটিং ম্যানেজার প্রদীপ কুমার চন্দ্র বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকারি ও বেসরকারি খাতের নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও বর্তমানে সরকারি জনবল নিয়োগ শুরু হয়েছে। বেসরকারি খাতের নিয়োগ এখনো প্রায় ৭০ শতাংশ বন্ধ রয়েছে।’

তিনি বলেন, আগে নিয়মিত নিয়োগ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রয় প্রতিনিধি ছাড়া প্রায় সব বিভাগে নিয়োগ বন্ধ রাখা হয়েছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ ছিল। এতে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, অনেকগুলো এখনো বন্ধ। অনেকে আবার দীর্ঘদিন ধরে বাসা থেকে অফিস করছেন। কিছু প্রতিষ্ঠানে অল্প সংখ্যক জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি একাধিক সাইটে প্রকাশ করলেও বর্তমানে তারা একটি বা দুটিতে দিচ্ছে। ধীরে ধীরে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের জনবল নিয়োগ কার্যক্রম সচল হচ্ছে।’

জবএক্সপ্রেসের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু করে। শুরুতে প্রতিদিন যে সংখ্যায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসতো, করোনা পরিস্থিতি শুরু হওয়ার পর তা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। উল্টো অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই হওয়ায় বেকারের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়ে গেলেও এ খাতে নিয়োগ কার্যক্রম এখনো সচল হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মচারী নিয়োগ এখনো বন্ধ। দু-একটি প্রতিষ্ঠানে বড় পদে কর্মকর্তা ও টেকনিক্যাল পদে নিয়োগ দেয়া হলেও অন্যান্য পদে হচ্ছে না। বর্তমানে এ স্থবিরতা সচল হতে শুরু করেছে।’

দেশের উন্নয়নের জন্য বেসরকারি খাতে অধিক চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সাহাদাত হোসেন।

তিনি বলেন, ‘দেশে অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছেন। এটি আগে থেকে ছিল, করোনা পরিস্থিতিতে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যা বাড়তে থাকলে বড় ধরনের সঙ্কট তৈরি হবে।’

তিনি বলেন, ‘করোনায় উন্নয়নকাজ, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ছোট-বড় উদ্যোক্তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। করোনার মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রি দিয়ে বেকারের সংখ্যা আরও বাড়িয়েছে। দেশের উন্নয়নে বেসরকারি খাতে অধিক চাকরির বাজার তৈরি করতে হবে। আমাদের কৃষি খাতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে নতুন নতুন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে হবে। সরকারকে এ খাতে সহজলভ্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।’

এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যুবসমাজে নতুন নতুন উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে। সেজন্য সরকারকে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরিতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনবল হিসেবে তৈরি করে দেশে-বিদেশে চাকরির সুযোগ করে দিতে হবে।’ আমাদের জনবলকে দক্ষ করে তুললে বিদেশে তারা অধিক মজুরি পাবেন বলে মনে করেন তিনি।

ইউকে/এসএম