বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং একই দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘ঐতিহাসিক’ গণভোটকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন (ইসি) তাদের প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এই দুই ভোট আয়োজনকে সফল করতে সংস্থাটি একটি বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। এক্ষেত্রে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ভোটগ্রহণের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
ইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে নির্দেশনা ও পরামর্শ নিতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ একটি নির্বাচনী রেওয়াজ।
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, কমিশনের ঘোষিত নির্বাচনী রোডম্যাপ অনুযায়ী, প্রায় সব প্রস্তুতিমূলক কাজই সম্পন্ন করা হয়েছে। সংলাপ, আইনি সংস্কার, ভোটকেন্দ্র চূড়ান্তকরণ, ভোট কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুত, রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধন শেষ হয়েছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। একই ভোটারের দু’টি ব্যালটে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে ইসির বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভোটকক্ষের গোপন কক্ষ বৃদ্ধি এবং ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো নিয়েও চলছে আলোচনা।
সম্প্রতি দুই ভোট একসঙ্গে করার জন্য মক ভোটিংয়ের আয়োজন করেছিল ইসি। এ ভোট পড়েছে ৭০ শতাংশের মতো।
মক ভোটিংয়ে উঠে আসা পর্যবেক্ষণ বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে সংস্থাটি। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এ বিষয়ে বলেন, দু’টি ভোট একসঙ্গে করার জন্য ভোটের সময় বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাড়তে পারে বুথও। এক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ সকাল ৮টার পরিবর্তে সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হতে পারে এবং চারটার পরিবর্তে সাড়ে ৪টায় শেষ হতে পারে।
ইতোমধ্যে ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে ইসি। দুটি ব্যালটে ভোট গ্রহণের সুবিধার্থে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা না বাড়লেও ভোটকক্ষ বা বুথের সংখ্যা প্রয়োজনে বাড়ানো হতে পারে, যা ২ লাখেরও বেশি হতে পারে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানিয়েছেন, এবার চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন যুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে এক হাজার ২৩৪ জন হিজড়া ভোটারও রয়েছেন। পুরুষ ভোটার দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন। আর নারী ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন।
এবারই প্রথম উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া তিন ক্যাটাগরির (আইনি হেফাজতে থাকা ব্যক্তি, ভোটের দায়িত্বে থাকা ও সরকারি কর্মচারীরা) ব্যক্তিরা এই সুযোগ নিতে পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার প্রবাসী নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন। তফসিল ঘোষণার দিন থেকে দেশের তিন ক্যাটাগরির ভোটাররাও নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন।
নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সামগ্রী, বিশেষ করে ব্যালট পেপার, নির্বাচনের আইন ও বিধি সংক্রান্ত নথিপত্র এবং অন্যান্য মুদ্রণসামগ্রীর চাহিদা নিরূপণ ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে কমিশন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনী সামগ্রী ছাপানো প্রায় শেষ। এখন কেবল ব্যালট পেপার ছাপানো বাকি রয়েছে।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসি একাধিক কমিটি, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তদারকি কমিটি, আইন-শৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটি এবং নির্বাচনী আইন, বিধি ও ইনকোয়ারি কমিটির কার্যক্রম তদারকি কমিটি থাকছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাহিনী তাদের সক্ষমতা ও পরিকল্পনা কথা জানিয়েছে ইসিকে। এবারের নির্বাচনের প্রায় ৬৭ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। সে বিবেচনায় কেন্দ্রের নিরাপত্তা বিভিন্ন বাহিনীর ফোর্স মোতায়েন থাকবে। সেনা থাকবে এক লাখের মতো। এ ছাড়া আনসার সদস্য থাকবে ছয় লাখের মতো। পুলিশ, র্যাব, কোস্ট গার্ড, গ্রাম পুলিশও নিয়োজিত থাকবে। সব মিলিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর আট লাখের বেশি সদস্য ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে পারে।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রয়োজন অনুসারে এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করবে। এবার সশস্ত্র বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে মোতায়েন থাকবে। এবং বাহিনীর হাতে থাকবে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাও।
এবার ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভোট কর্মকর্তারা শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করার ক্ষমতা পাবেন। নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এ বিষয়ে বলেন, নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আদালতের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
দলগুলোর মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনৈক্য থাকলেও তারা ভোটের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। দলগুলোর তাদের প্রার্থীও ঘোষণা দিচ্ছে। এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি বিএনপি চেয়ারপার্সন অসুস্থ থাকায় রাজনৈতিক অস্থিরতাকে মাথায় রেখে তফসিল ঘোষণার প্রতি জোর দিয়েছে। তবে বিএনপি বলছে অনির্বার্য কারণ ব্যতীত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিলম্ব চায় না। এদিকে বাংলাদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের পরবর্তী সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করা হয়েছে।
ভোটের সকল প্রস্তুতি নিয়ে দেশি বিদেশি মহল থেকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হলেও খোদ নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন পক্ষ থেকে কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও বলা হচ্ছে।
ইউকে/আরএএস