বাড়িতে মিললো নারী কৃষি কর্মকর্তার মরদেহ, স্বামী গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর পুঠিয়ায় গ্রামের বাড়ি থেকে খাদিজা আক্তার (৪৫) নামের একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত খাদিজা বেগম উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ওহাব আলীর স্ত্রী। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে কর্মরত ছিলেন।
তবে কৃষি কর্মকর্তা খাদিজাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ এনে থানায় মামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় খাদিজার স্বামী ওহাব আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হোসেন সোহরাওয়ার্দী বলেন, ঘটনার পর নিহতের স্বামীর কাছ থেকে এলোমেলো বক্তব্য পাওয়া গেছে। খাদিজার স্বামী পুলিশকে জানান, গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুন) রাতে প্রতিদিনের মত খাবার খেয়ে খাদিজা তার স্বামী ও শিশু সন্তানসহ ঘুমিয়ে পড়েন। রাতে বিছানায় না দেখে খাদিজার স্বামী ঘরের বাইরে গিয়ে দেখেন, বাড়ির পুরাতন একটি ঘরের তীরের সঙ্গে তার স্ত্রীর দেহ ঝুলছে। এ সময় তার স্বামী বাড়ির অন্য সদসদের সহযোগিতায় তাকে নামানো হয়। ততক্ষণে সে মারা যায়। পরে পুঠিয়া থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

ওহাব বলেছেন, রাতের খাবার শেষে তারা শুয়ে পড়েন। এরপর তার স্ত্রী কখন উঠে গিয়ে গলায় দড়ি দিয়েছে তা বুঝতে পারেন নি। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ছোট ছেলে ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি শুরু করে।

এরপর খাদিজাকে ঘরে না পেয়ে খুঁজতে থাকেন। পরে বাড়ির পুরনো ঘরের তীরে তার ঝুলন্ত মরদেহ খতে পান। এরপর সকালে পুঠিয়া থানায় খবর দেওয়া হয়।

এদিকে, খাদিজা আক্তারের ভাই আবুল কালাম বলেন, মরদেহের শরীরে আত্মহত্যার কোনো আলামত নেই। তাকে কৌশলে মেরে ফেলা হয়েছে। তাছাড়া ওই বাড়ির পাশের কোনো লোক খাদিজাকে ফাঁসিতে ঝুলতে দেখেনি।

ওহাব আলী ও খাদিজা আক্তারের বিয়ে হয়েছে প্রায় ২০ বছর আগে। খাদিজার বাবার বাড়ি বগুড়া জেলা সদরে। চাকরির কারণে তারা দুজনই রাজশাহী শহরে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। কিন্তু প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। ওহাব মহানগরীর পুলিশ লাইন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রদর্শক হিসেবে কর্মরত। সে তার স্ত্রীর ওপর মাঝে মধ্যে নির্যাতন করতো। মঙ্গলবার বিকালেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে। এরপর রাতে কী হয়েছে তা পাশের বাড়ির কেউ জানেন না। ভোরে তার স্বামীর বাড়ির লোকজন বলছেন, খাদিজা আত্নহত্যা করেছেন।

তবে নিহতের নয় বছরের ছেলে গালিব জানিয়েছে, ঘটনার রাতে এই বাড়িতে তারা তিন ভাই মা-বাবা ও দাদী ছাড়া কেউ ছিল না। রাতে তারা সবাই ঘুমিয়ে ছিল।

ঘুমানোর আগে বাবা ও মার মধ্যে কোনো ঝগড়া বা মারামারি তারা দেখতে পায়নি। এরপর অনেক রাতে দাদী আমাদের ঘুম থেকে ডেকে তুলেছেন। এরপর গিয়ে দেখি মা মরে গেছে। তবে কীভাবে মারা গেছে গালিব তা জানে না।

রাজশাহীর পুঠিয়া থানার ওসি হোসেন সোহরাওয়ার্দী বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করেছে।

মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় হত্যার অভিযোগে নিহতের ভাই মামলা করেছেন। ওই মামলায় খাদিজার স্বামী ওহাব আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এই মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে বলে জানান- এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ইউকে/এসই/এসএম