সিন্ডিকেট ঠেকাতে ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানিতে নজর

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের চামড়া খাত। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়া করা পশম ছাড়ানো চামড়া (ওয়েট ব্লু) ও কাঁচা চামড়া। চলতি অর্থবছরে গত ১১ মাসে কাঁচা এবং ওয়েট ব্লু চামড়ার রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.৪৩ শতাংশ।

তা ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোরবানির চামড়ার সিন্ডিকেট ঠেকাতে গত ১৭ জুন তিন প্রতিষ্ঠানকে ৬০ লাখ বর্গফুট ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। আগামী ৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত এই অনুমোদন কার্যকর থাকবে।

এদিকে খাতসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এই খাতের প্রধান কাঁচামালের পচন ও নষ্ট হওয়া রোধ করা গেলে হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববাজারে উন্নতি করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্য ওয়েট ব্লু ও কাঁচা চামড়া রপ্তানিতে নীতিসহায়তা দিতে হবে সরকারকে। এ ছাড়া চামড়া খাতের কলঙ্ক সাভারের ট্যানারিপল্লীকে শতভাগ কমপ্লায়েন্সে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হাজি টিপু সুলতান বলেন, ‘প্রতিবছর কোরবানিতে প্রায় এক কোটি পশু কোরবানি হয়। এটা সারা বছর চামড়া সংগ্রহের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি। কিন্তু যথাযথ সংরক্ষণ ও নজরদারির অভাবে কয়েক বছর ধরে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়। এই রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সরকারকে প্রচারণা, সংরক্ষণ এবং নায্য দাম নিশ্চিত করতে নজরদারিতে আরো জোর দিতে হবে।’

এদিকে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) গত ১১ মাসে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৮৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪.৪৩ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ শতাংশের কিছুটা বেশি। চলতি অর্থবছরে মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯২ কোটি ডলার।

এ সময় কাঁচা এবং ওয়েট ব্লু চামড়ার রপ্তানিতে আয় হয়েছে ১০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে এই আয় ১৬.৪৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের এই সময় আয় ছিল ৭৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

এ ছাড়া চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানিতে আয় হয়েছে ২২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব না হলেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ শতাংশের বেশি। এ ছাড়া চামড়ার জুতা রপ্তানিতে আয় হয়েছে ৫১ কোটি ১৪ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের একই সময়ে আয় হয় ৪৩ কোটি ৬৮ লাখ ডলার।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির চামড়া নিয়ে ট্যানারির মালিক ও আড়তদারদের কারসাজি ঠেকাতে সরকার গত বছর কাঁচা চামড়া এবং ওয়েট ব্লু চামড়া সীমিত আকারে রপ্তানির সুযোগ দিয়েছে। এর ফলে বেশ সাড়া পাওয়া গেছে। এবার সতর্ক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কোরবানির পশুর চামড়া যথাযথ সংরক্ষণ এবং কোরবানিদাতা ও ফড়িয়ারা যেন ন্যায্য দাম পান এ জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ টাস্কফোর্স কাজ করবে।

এ বিষয়ে লেদার ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিরুদ্ধ রায় বলেন, ‘কোরবানির চামড়া ফেলে নষ্ট না করার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে সরকার তার প্রতিষ্ঠানসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দিয়েছে। ২০ লাখ বর্গফুট করে তিনটি প্রতিষ্ঠান ৬০ লাখ ফিট চামড়া রপ্তানি করবে। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হবে। তারা চামড়া নষ্ট না করে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবে।’

ইউকে/এএস