নিজেকে ডন ভাবতেন মুক্তার, বাড়িতেই মিললো অস্ত্রাগার

নিজস্ব প্রতিবেদক:  কেঁচো খুড়তে সাপ বেড়িয়ে এসেছে রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভার আলোচিত পৌর মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ি থেকে। নিজেকে ডন মনে করতেন এই পৌর মেয়র। বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ছাড়াও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে। এজন্য দল থেকেও হয়েছেন বহিষ্কৃত। তার বাড়িতে নগদ কোটি টাকা ছড়াও মিলছে ছোটখাটো একটি অবৈধ অস্ত্রাগার। তবে অল্পের জন্য পালিয়ে বেঁচেছেন।পৌর মেয়রের অবৈধ অস্ত্রাগারের খনিতে পুলিশ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- একটি ৭.৬৫ অটোমেটিক বিদেশি পিস্তল, ৭.৬৫ পিস্তলের ৪টি ম্যাগজিন, ৭.৬৫ পিস্তলের ১৭ রাউণ্ড তাজা গুলি, ৭.৬৫ পিস্তলের ৪টি গুলির খোসা, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি দেশি তৈরি বন্দুক, একটি এয়ার রাইফেল, শটগানের ২৬ রাউন্ড গুলি। এছাড়া মিলেছে মাদকদ্রব্যও! এর মধ্যে রয়েছে ১০ গ্রাম গাঁজা, ৭ পুরিয়া হেরোইন ও ২০পিস ইয়াবা। আর নগদ অর্থ সম্পদের মধ্যে ওই বাড়ি থেকে ১৮ লাখ টাকার স্বাক্ষর করা চেক এবং নগদ ৯৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা জব্দ করেছে পুলিশ। এখন ছোট একটা পৌরসভার মেয়রের বাসায় নগদ কোটি টাকা ও এত অবৈধ অস্ত্রশস্ত্র কিভাবে আসলো আর কিভাবে তিনি এত বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেন তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে গোটা রাজশাহী জুড়ে। গত রাতের পুলিশি অভিযানের পর মেয়র মুক্তার আলী টক অব দ্য সিটিতে পরিণত হয়েছেন।

রাজশাহীর আড়ানীর পৌরসভার এই মেয়র মুক্তার আলী নিজেকে মনে করতেন এলাকার ডন। গতকাল রাতে মদ খেয়ে একজন কলেজ শিক্ষককে মারধর করেছেন। সেই অভিযোগে আগেই থানায় মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় তাকে ধরতে গিয়ে বাড়িতে পাওয়া গেল ছোটখাটো অস্ত্রাগার। অভিযানে নেতৃত্ব দেন খোদ রাজশাহী জেলার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন দু সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় পুরো ঘটনার তথ্য তুলে ধরেন।

প্রেস ব্রিফিংকালে রাজশাহী পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান- জেলা পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদক এবং প্রায় এক কোটি টাকাসহ তিনজন আটক করা হয়েছে। বুধবার (৭জুলাই) ভোররাত তিনটার দিকে রাজশাহীর বাঘা থানার আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বাড়ি থেকে এসব অবৈধ মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় মেয়র মুক্তার আলী পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার স্ত্রী মোসাম্মদ জেসমিন আক্তার (৪০), মেয়র মুক্তারের দুই ভাতিজা সোহান আলী (২৫) এবং শান্ত ইসলাম (২৩) আটক করা হয়েছে।

রাজশাহী পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, মঙ্গলবার (৬ জুলাই) রাত সাড়ে নয়টার দিকে মুক্তার আলী মদ্যপ অবস্থা তার দলবল নিয়ে আড়ানী পৌরসভার জয়বাংলা মোড়ে নাটোরের বাগাতিপাড়া বাঁশবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন মজনুর বাড়ি সংলগ্ন ওষুধের দোকানে গিয়ে হট্টগোল শুরু করেন। মেয়র ও তার দলবলের ভয়ে মজনু বাড়ির ভেতরে চলে গেলে মেয়র ও তার সহযোগীরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে মজনুকে মারপিট শুরু করেন। মজনুর কলেজ পড়ুয়া ছেলে এবং স্কুল শিক্ষক স্ত্রী মজনুকে রক্ষা করতে এলে মেয়র তাদেরকেও মারপিট করে আহত করা হয়। মজনু গত পৌর নির্বাচনে নৌকা মার্কার পক্ষ নিয়ে মেয়রের বিরোধী শিবিরে নির্বাচনে কাজ করেছিল বলেই তার ওপর হামলা চালায় পৌর মেয়র ও তার দলবল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গত রাতেই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে পৌর মেয়র মুক্তার আলী (৪৫) ও তার সহযোগী সাবেক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. আঙ্কুরের (৩২) নাম উল্লেখ করে এবং ৩/৪ জন অজ্ঞাতনামা বিরুদ্ধে মামলা করেন। (মামলা নম্বর ৭ তারিখ ৭/৭/২০২১)

মামলা দায়েরের পর পুলিশ সুপারের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম এবং সহকারী পুলিশ সুপার ডিএসবি (চারঘাট সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রুবেল আহমেদের নেতৃত্বে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলামসহ একটি চৌকস পুলিশ দল মেয়র ও তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান চালায়। অভিযানের এক পর্যায়ে মেয়রের সন্ধানে তার বাড়িতে তল্লাশি চালানো হলে সেখান থেকে এসব অবৈধ অস্ত্র, গুলি, মাদক, নগদ টাকা এবং মেয়রের স্বাক্ষর করা চেক উদ্ধার করা হয়।

রাজশাহীর এসপি আরও জানান, এ ঘটনায় মেয়র মুক্তার আলী পালিয়ে গেলেও তার বাড়ি থেকে তার স্ত্রীসহ তিনজনকে আটক করা হয়। মেয়রের বাড়িতে পাওয়া কোন অস্ত্রেরই লাইসেন্স ছিল না এবং উদ্ধারকৃত টাকার কোন জবাব তারা দিতে না পারায় জব্দ তালিকামূলে সব জব্দ করে আনা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন পুলিশ সুপার।

এদিকে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার মেয়র মুক্তার আলীর বিরুদ্ধে এঘটনায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় আটককৃত মেয়রের স্ত্রী জেসিমিন ও দুই ভাতিজাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

মামলার প্রশ্নে বুধবার বিকেলে রাজশাহীর বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসি নজরুল ইসলাম এর মধ্যে জানান- একটি মামলা দায়ের করেছেন- মনোয়ার হোসেন অপর দুটি পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে। মামলা আটককৃত স্ত্রী জেসমিন আক্তার এবং দুই ভাতিজা শান্ত ইসলাম ও সোহান আলীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এছাড়া মেয়র মুক্তাকে পলাতক দেখানো হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আর গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতের মাধ্যমে বিকেলে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান রাজশাহীর বাঘা থানার এই পুলিশ কর্মকর্তা।

ইউকে/এসএম