ট্র্যাজেডি কিংয়ের রঙিন জীবন

বিনোদন বিভাগ: দিলীপ কুমারের নামের পাশে সব সময় যে উপাধিটা বসতো তা হলো ‘ট্র্যাজেডি কিং’। পর্দায় ট্র্যাজেডির নায়ক হলেও দিলীপ কুমারের ব্যক্তিগত জীবন ছিল রঙিন।

ব্যবসায়ী হতে যাওয়া ইউসুফ খান হয়ে যান মেগাস্টার দিলীপ কুমার। অভিনয়ের পাশাপাশি বারবার তার নায়িকাদের প্রেমে পড়ার গুঞ্জন শোনা যেত। যেসব নায়িকাদের সঙ্গে দিলীপ কুমারের নাম জড়িয়েছে, তাদের নিয়ে এই আয়োজন-

কামিনী কৌশল
দিলীপ কুমার আর স্ত্রী সায়রা বানুর নাম একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। তবে সেটিই দিলীপের জীবনের প্রথম ছিল না। নায়ক হওয়ার আগের খবর পাওয়া না গেলেও, রঙিন দুনিয়া পা রাখার পর তার প্রথম প্রেমিকা ছিলেন অভিনেত্রী কামিনী কৌশল। ১৯৪৮ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র ‘শহিদ’- এ একসঙ্গে কাজ করেছিলেন তারা। সে সময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তখন বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে মুখরোচক খবর ছিল তাদের প্রেমকাহিনী।

দিলীপ ও কামিনী বিয়ে করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে বাধা দেন কামিনীর দাদা। তিনি এই সম্পর্কে রাজি ছিলেন না। শোনা যায় তিনি নাকি দিলীপ কুমারকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলেন।

এরপর তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। সে বছরই কামিনী বিয়ে করেন তার প্রয়াত বড় বোনের স্বামীকে। দুর্ঘটনায় নিহত বোনের দুই মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেন কামিনী।

মধুবালা
কামিনী কৌশলের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর দিলীপ কুমার তৎকালীন উপমহাদেশের হার্টথ্রব নায়িকা মধুবালার প্রেমে পড়েন। দীর্ঘ সাত বছরের প্রেমের সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত বিয়েতে শেষ হয়নি। দুই তারকার ইগো সমস্যায় তাদের সম্পর্ক বেশিদিন টেকেনি।

জানা যায়, একটি সিনেমার শুটিং লোকেশনে মধুবালাকে যেতে দিতে রাজি ছিলেন না তার বাবা আতাউল্লাহ খান। পরিচালক-প্রযোজকের অনুরোধে দিলীপ কুমার কথা বলতে যান তার বারবার সঙ্গে। সাক্ষাত শেষে দিলীপ কুমার বলেন, মধুবালার বাবা তাকে অপমান করেছেন। অন্য দিকে মধুবালার বক্তব্য ছিল, দিলীপ কুমারের কাছে অপমানিত হয়েছেন তার বাবা।

মধুবালা তার বাবার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারেননি। তার কথায় আতাউল্লাহর কাছে ক্ষমাও চাননি দিলীপ। এ কারণেই ভেঙে যায় দিলীপ কুমার ও মধুবালার প্রেম।

১৯৬০ সালে মধুবালা বিয়ে করেন কিশোর কুমারকে। এরপর দিলীপ কুমার সায়রা বানুকে বিয়ে করলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন মধুবালা। তার তিন বছর পরে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে প্রয়াত হন তিনি।

সায়রা বানু
কামিনী কৌশল ও মধুবালার পরে দিলীপ কুমারের জীবনে আসেন সায়রা বানু্। ১৯৬৬ সালে ৪৪ বছর বয়সী দিলীপ কুমার বিয়ে করেন ২২ বছর বয়সী সায়রা বানুকে।

বিয়ের পরে সায়রা বানু একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি ১২ বছর বয়স থেকেই দিলীপ কুমারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন। অথচ দিলীপ তাকে প্রথম দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন না। প্রথম আলাপে সায়রা বানুর রূপের প্রশংসা করলেও ‘বাচ্চা মেয়ে’বলে বজায় রাখতেন দূরত্ব।

ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখার পর সায়রা বানুর ভালো লাগার সম্পর্ক তৈরি হয় রাজেন্দ্র কুমারের সঙ্গে। কিন্তু তার মা অভিনেত্রী নাসিম বানুর হস্তক্ষেপে বিবাহিত রাজেন্দ্র কুমারের কাছ থেকে সরে আসতে হয় সায়রাকে।

এরপর নাসিম বানু উদ্যোগ নিয়ে দিলীপ কুমারের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। এ সময় সায়রা বানুর মনে হয়েছিল, দিলীপ কুমারকে স্বামী হিসেবে পেয়ে তার বহু দিনের স্বপ্ন পূর্ণ হলো।

সে সময় অনেকেই বলেছিলেন, এই বিয়ে বেশিদিন স্থায়ী হবে না। কিন্তু নিন্দুকদের মুখ বন্ধ করে দিলীপ কুমার-সায়রা বানু দু’জনে দু’জনের পাশে ছায়া হয়ে পাঁচ দশকের বেশি দাম্পত্যজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন।

আসমা সাহিবা
যে জুটিকে বলিউডের সবচেয়ে আদর্শ জুটি বলা হয়, সেই দিলীপ কুমার ও সায়রা বানুর বিয়েও এক সময় ভেঙে যায়। পাকিস্তানের নাগরিক আসমা সাহিবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন দিলীপ কুমার। সায়রা বানুকে ডিভোর্স করে বিয়ে করেছিলেন আসমাকে।

কিন্তু দিলীপ কুমারের এ বিয়ে টেকে মাত্র দুই বছর। এরপর তিনি ফিরে আসেন সায়রা বানুর কাছে। আবার বিয়ে করেন তাকে।

ইউকে/এএস