ইভ্যালির বিরুদ্ধে অভিযোগ দুদক অনুসন্ধান করবে

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: দাম ছাড়ে তাক লাগিয়ে আলোচনায় আসা অনলাইনে কেনাবেচার প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গ্রাহকের ৩৩৯ কোটি টাকা লাপাত্তাসহ বিপুল পরিমাণ বকেয়া অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচারের দুই অভিযোগ খতিয়ে দেখবে দুদক। গতকাল বৃহস্পতিবার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে দুদক একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে।

দুদক কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক খান অনুসন্ধান সেলকে বলেন, ‘ইভ্যালির বিরুদ্ধে আগেও আমাদের কাছে অর্থপাচারের একটি অভিযোগ এসেছিল। এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও লিখিত আকারে তাদের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে জানিয়েছে। আমরা আগের অভিযোগ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া অভিযোগ দুটিই একসঙ্গে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাচাই-বাছাই শুরু হয়ে গেছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আমরা ইভ্যালির বিরুদ্ধে মামলা করব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থ নেব।’

গত ৪ জুলাই ইভ্যালির বিরুদ্ধে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে পৃথক চিঠি দেয় দুদক। চিঠিতে বলা হয়, ইভ্যালির বিরুদ্ধে গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা ও মার্চেন্টদের কাছে বিপুল পরিমাণ বকেয়া অর্থ আত্মসাৎ বা মানি লন্ডারিং কিংবা অন্য কোনো আর্থিক অনিয়ম হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

দুদকের চিঠিতে আরো বলা হয়, ইভ্যালির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ১৪ মার্চ ইভ্যালির মোট সম্পদ ছিল যেখানে ৯১ কোটি ৬৯ লাখ ৪২ হাজার ৮৪৬ টাকা (চলতি সম্পদ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা), তাদের মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৪ টাকা। ওই তারিখে গ্রাহকের কাছে ইভ্যালির দায় ছিল ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ছয় হাজার ৫৬০ টাকা এবং মার্চেন্টের কাছে দায় ছিল ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া হয়েছে ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ ছয় হাজার ৫৬০ টাকা। প্রতিষ্ঠানটি মার্চেন্টদের কাছ থেকে মালপত্র নিয়েছে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকার। এখন স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ এক হাজার ৯১৪ টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও তাদের সম্পদ রয়েছে মাত্র ৬৫ কোটি ১৭ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৬ টাকা। ইভ্যালি তাদের চলতি সম্পদ দিয়ে মাত্র ১৬.১৪ শতাংশ গ্রাহককে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে বা অর্থ ফেরত দিতে পারবে। বাকি গ্রাহক ও মার্চেন্টের পাওনা পরিশোধ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে গ্রাহক ও মার্চেন্টের কাছ থেকে গৃহীত ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ ১৮ হাজার ১৭৮ টাকা আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে।

একইভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ৩৩৮ কোটি টাকা ইভ্যালি আত্মসাৎ কিংবা অবৈধভাবে সরিয়ে ফেলার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মামলা করতে সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে পাঠানো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে অগ্রিম টাকা দিয়ে যেসব গ্রাহক এখনো পণ্য পাননি এবং মূল্য ফেরত পাচ্ছেন না, তাঁদের অধিকার সুরক্ষা করতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকেও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এর মধ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে, গ্রাহকদের কাছ থেকে ২১৪ কোটি টাকা অগ্রিম গ্রহণ করে পণ্য ডেলিভারি না দেওয়া এবং মার্চেন্টদের ১৯০ কোটি টাকা পাওনা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করে যেন দ্রুত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ইউকে/এএস