অক্সিজেনবহনকারী ছেলেকে আটকে রাখায় বাবার মৃত্যু: অভিযুক্ত এএসআই প্রত্যাহার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: সাতক্ষীরায় অক্সিজেন সিলিন্ডারবহনকারী ছেলেকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখায় বাড়িতে শ্বাসকষ্টে বাবার মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুভাষ শিকদারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) রাতেই তাকে সাতক্ষীরা পুলিশ লাইনসে প্রত্যাহার করা হয় বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান।

করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা রজব আলী মোড়ল (৬৫) বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় সিলিন্ডারের সাহয্যে বাড়িতেই তাকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছিল। সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল ফেরদৌস আলফা ওই বৃদ্ধের ছেলে ওলিউল ইসলামের মাধ্যমে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হলে ওলিউল ইসলাম বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে করে নতুন আরেকটি সিলিন্ডার নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলেন। পথে সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে সেখানে দায়িত্বরত কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ শিকদার তাকে দাঁড় করিয়ে গাড়ির কাগজপত্র দেখতে চান। অক্সিজেন লাগবে বলে তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে কাগজ আনতে ভুলে গেছেন বলে জানান ওলিউল। এসময় অনুনয় বিনয় করে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও মন গলেনি এএসআই সুভাষ শিকদারের।

একপর্যায়ে ইটাগাছা এলাকার জনৈক জিয়াউল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে এএসআই সুভাষ শিকদারকে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলে তিনি এক হাজার টাকা দাবি করেন। পরে ২০০ টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেন এএসআই সুভাষ। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ওলিউল অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেয়ে দেখেন অক্সিজেনের অভাবে তার বাবা মারা গেছেন।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ওলিউল বলেন, আমি বাবার অসুস্থতার কথা বলে পুলিশ কর্মকর্তার কাছে অনেক অনুনয় বিনয় করেছিলাম। বলেছিলাম, অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দ্রুত বাড়িতে না গেলে আমার বাবা মারা যাবেন। কিন্তু কোনোভাবেই তার মন গলেনি। যদি সময়মত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম, তাহলে হয়তো আমার বাবা বাঁচতেন। তিনি এ অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।

এদিকে এ ঘটনা জানার পর রাতেই সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসেনসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা এসময় ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিক ও আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন।

সাতক্ষীরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) সজিব খান বলেন, কাটিয়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষ শিকদারকে রাতেই ক্লোজ করা হয়েছে।

ইউকে/এএস