বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠানোসহ বিভিন্ন সুবিধার কারণে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মোবাইল ব্যাংকিং। মহামারি করোনার এই সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়েছে। মানুষ ঘরে বসেই বিভিন্ন লেনদেন সারছেন। ফলে প্রতি মাসেই লেনদেনে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। সর্বশেষ মে মাসেও মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। ওই মাসে মোট লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় দুই হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। মূলত করোনার সংক্রমণ রোধে বিধি-নিষেধ আরোপ ও রোজার ঈদের কারণে মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে এই উল্লম্ফন হয়।
দ্বিতীয় দফায় করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত এপ্রিল থেকেই সারা দেশে বিধি-নিষেধ আরোপ করে সরকার। রোজার ঈদের আগে বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করে বিপণিবিতানগুলো সীমিত সময়ের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে রোজার ঈদের পর পর্যন্ত দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রাখা হয়। ফলে ওই সময় পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠানোসহ বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার বেশি হয়। এতে বেড়ে যায় লেনদেনের পরিমাণও। শুধু লেনদেনই নয়, এই সেবায় গ্রাহকও বাড়ছে দ্রুতগতিতে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তাৎক্ষণিক এক স্থান থেকে অন্য স্থানে, শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে সবার কাছে বেশ জনপ্রিয় মোবাইল ব্যাংকিং। শুধু অর্থ পাঠানোই নয়, অনেক নতুন নতুন সেবাও মিলছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান ও বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোসহ (রেমিট্যান্স) বিভিন্ন সেবা দেওয়া হচ্ছে। এসব সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। চলতি বছরের মে মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ কোটি ৮১ লাখ ৩১ হাজার। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলের গ্রাহক রয়েছে পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ ৪২ হাজার। আর শহরের গ্রাহক তিন কোটি ৯৪ লাখ ৮৩ হাজার। এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৬৭১ জন।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, মে মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ২৯৮ কোটি টাকা, যা একক মাস ও দৈনিক লেনদেনে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এর আগের মাস এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয় ৬৩ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। আর দৈনিক লেনদেন হয় দুই হাজার ১১৫ কোটি টাকা, যা এখন পর্যন্ত একক মাস হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় টাকা জমা পড়ে (ক্যাশ ইন) ১৯ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। আর ১৯ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা উত্তোলন (ক্যাশ আউট) হয়। রোজার ঈদ থাকায় মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে কেনাকাটার বিলও পরিশোধ হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই মাসে তিন হাজার ৬৫০ কোটি টাকা কেনাকাটা বিল পরিশোধ করেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকরা। এর আগের মাস এপ্রিলে কেনাকাটার বিল পরিশোধ ছিল দুই হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। এ সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে ব্যক্তির হিসাব থেকে আরেক ব্যক্তির হিসাবে ২১ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা পাঠানো হয়। এ ছাড়া মে মাসে কর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয় দুই হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা। গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানিসহ বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ হয় এক হাজার ১০৭ কোটি টাকার।
ইউকে/এএস