বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: করনায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে আগে থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ ভারত। এবার এই প্রশ্ন আরো জোরালো হল গত মে মাসে মৃত প্রায় তিন লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ‘অজানা’ থাকায়। এদের মধ্যে কারো কারো জ্বরসহ করোনার নানা উপসর্গ ছিল। সরকারি একটি হিসেবের বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মারা যাওয়া এসব ব্যক্তিদের করোনা পরীক্ষা হয়েছিল কী হয়নি, সে ব্যাপারে কোনো তথ্যই নেই ভারত সরকারের কাছে।
শহরাঞ্চল এবং গ্রামীণ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৩ সালে জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প (ন্যাশনাল হেল্থ মিশন) শুরু করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হেল্থ ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম (এইচএমআইএস), যার মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যাবতীয় পরিষেবা এবং কাজকর্মের হিসেব রাখা হয়। আর তাতেই কেন্দ্রের কভিড পরিসংখ্যান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এইচএমআইএস-এর কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী, মহামারির আগে ২০১৯ সালের মে মাসে যত জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীন ২০২১-এর মে মাসে তার চেয়ে প্রায় ৩ লাখ মানুষ বেশি মারা গেছেন। শুধু তাই নয়, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী মে মাসে করোনায় দেশটিতে মারা গেছেন ১ লাখ ২০ হাজার ৭৭০ মানুষ। ওই একই মাসে অজ্ঞাত কারণে তার প্রায় আড়াই গুণ বেশি মানুষ মারা গেছেন।
করোনা পরিস্থিতির আগে ২০১৯ সালে প্রত্যেক মাসে দেশে গড়ে দুই থেকে দুই লাখ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল বলে জানিয়েছে তারা। কিন্তু ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে তা বেড়ে ৩ লাখ ১০ হাজারে পৌঁছায়। মে মাসে তা আরো বেড়ে হয় ৫ লাখ ১১ হাজার। ২০২০ সালের মে মাসের তুলনায় যা ১৭৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের মে মাসের তুলনায় বেশি প্রায় ১৫০ শতাংশ।
তথ্য ঘেঁটে আরো দেখা গেছে, ২০২১ সালের মে মাসে দেশটিতে প্রায় ৪ লাখ ৯২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজারের মৃত্যুর কারণই জানা যায়নি। মৃত্যুর কারণ হিসেবে নামের পাশে ‘অজ্ঞাত কারণে মৃত্যু’ লেখা রয়েছে। বাকিদের অধিকাংশের নামের পাশে মৃত্যুর কারণ লেখা রয়েছে জ্বর এবং শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা। মৃতদের কারো করোনা পরীক্ষা হয়েছিল কি না, তা নিয়ে কোনো তথ্য দেওয়া নেই।
মে মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন তুঙ্গে, তখন কেন বিস্তারিত তথ্য নেই তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। ছত্রিশগঢ়ের গ্রামীণ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা যোগেশ জৈন বলেন, ‘এই সমস্ত মৃত্যুকে কভিডে মৃত্যু হিসাবেই ধরা উচিত। মে মাসে যখন করোনায় গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছিল, সেই সময় নিশ্চয়ই ম্যালেরিয়ায় এত লোকের মৃত্যু হয়নি।
হিসাবের এই গরমিল নিয়ে কেন্দ্রের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘কভিডে মৃত্যুর ক্ষেত্রে কেন্দ্র শুধু যাবতীয় তথ্য এক জায়গায় এনে তা প্রকাশ করে। যাবতীয় তথ্য আসে রাজ্য সরকারগুলির কাছ থেকে। ফলে সেই সব হিসাবে গণ্ডগোল থাকলে কেন্দ্রের প্রকাশিত হিসাবেও গড়মিল থাকতে বাধ্য।’
সূত্র: আনন্দবাজার।
ইউকে/এএস