‘জঙ্গিগোষ্ঠী হেফাজতের সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে’

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: জামাত শিবির জঙ্গিগোষ্ঠী হেফাজতের সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

বৃহস্পতিবার (২০ মে) বিকেলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘জামায়াত-হেফাজতের সন্ত্রাসের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ: সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক ওয়েবিনারের তিনি এ কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসীদের আধিক্য এতটাই বেশি ছিল, সারাবিশ্ব সেদিন তাদের তাণ্ডব এবং বর্বরতা দেখেছে। হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে যথেষ্ট পরিমান পুলিশ সদস্য থাকা সত্ত্বেও, সেদিন পুলিশকে পিছু হটতে হয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্কুল-কলেজের চেয়ে মাদরাসার সংখ্যা বেশি। সেখানে এক বিল্ডিংয়েই তিন-চারটা মাদরাসা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদরাসার সংখ্যা ৭০০ থেকেও বেশি। সেখানে কেন এত মাদরাসার আধিক্য সেটা আমি জানি না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সন্ত্রাসের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বেশির ভাগকেই আমরা ধরে ফেলেছি। এখানকার এক-দু’জন মাদরাসার শিক্ষক তাদের ছাত্রদের জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিত, এটাও আমরা শুনেছি। তাদেরও ধরার জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় রয়েছি। তারাও ধরা পড়বে। ভবিষ্যতে আর যেন এমন রক্তপাত না হয়, সেই কারণে আমরা কাউকে ছাড়ও দেইনি এবং মামলা থেকে বাদও দেওয়া হয়নি।

মাদরাসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোনো একটা পাড়া বা গ্রাম নেই যেখানে মাদরাসা নেই। যত্রতত্র যেন মাদরাসা না হয়, যে কেউ যেন আর মাদরাসা না করতে পারে, সেই বিষয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। শীঘ্রই আমরা একটা নীতিমালা তৈরি করতে চাচ্ছি। আমরা এই বিষয়ে সভাও করছি।

হেফাজতে ইসলামের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তারপরেও তারা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে, হরতাল দিচ্ছে। যেহেতু তারা রাজনৈতিক দল নয় তাই তারা এগুলো করতে পারে না, এসব বেআইনি। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তাদের প্রায় সবার নামে মামলা হয়েছে, অনেকে গ্রেফতারও হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একটি জিনিস আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমরা যখন জামাত-শিবির, সন্ত্রাসী জঙ্গিগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করেছি। আমার মনে হয়, তারা আবারও হেফাজতের সাইনবোর্ডে সামনে চলে আসছে। জামাত-শিবির জঙ্গিগোষ্ঠী বর্তমানে হেফাজতের সাইনবোর্ড ব্যবহার করছে। আমরা যেখানেই যাচ্ছি এমন প্রমাণ পাচ্ছি। হেফাজতের নেতৃত্ব তারা নিয়ে নিয়েছে এমনটাই আমার মনে হচ্ছে। হাটহাজারীতে যারা নেতৃত্ব এবং পরামর্শ দিচ্ছেন, অনেকটাই আগের জঙ্গী সংগঠনের নেতা কিংবা এই ধরনের সন্ত্রাসের সঙ্গে পূর্বেও জড়িত ছিল। আমরা কাউকেই ছাড় দিচ্ছিনা’।

ওয়েবিনারের সভাপতিত্ব করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির।

আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন, ‘জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মাণিক, জাতীয় সংসদের ‘আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাস’-এর সদস্য এবং সংসদ সদস্য উবায়দুল মুকতাদির চৌধুরী, ‘জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’-এর সদস্য মানবাধিকার নেত্রী এবং সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, রিজিওনাল এন্টি টেরোরিস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া কবীর, সুইডেন প্রবাসী নির্মূল কমিটির সর্ব ইউরোপীয় শাখার সভাপতি মানবাধিকার নেতা তরুণ কান্তি চৌধুরী, সুইজারল্যান্ড প্রবাসী গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অমি রহমান পিয়াল, নির্মূল কমিটির বহুভাষিক সাময়িকী ‘জাগরণ’ এর যুগ্ম সম্পাদক অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট লেখক মারুফ রসুল, নির্মূল কমিটির অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ডা. একরাম চৌধুরী, নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল প্রমুখ।

ইউকে/এসএম