নিজস্ব প্রতিবেদক: আমের রাজধানী রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সাত হাজার ২৬৮ কেজি আম নিয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা দিয়েছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে নামমাত্র ভাড়ায় প্রতিদিন এই ট্রেন আমসহ অন্যান্য ফল এবং কাঁচামাল ও সবজি ঢাকায় নিয়ে যাবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রান্তেও এই ট্রেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের আম নিয়ে এসে ট্রেনটি বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায়। এরপর এখানে আরও বেশি পরিমাণ আম ওঠানো হয়। পরে ৫টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহী ছেড়ে যায়।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম জানান, সাত হাজার ২৬৮ কেজি আম নিয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা দিয়েছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’।
এর মধ্যে ট্রেনটি রাজশাহী থেকেই নিয়েছে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ৩৪৩ কেজি আম। এর মধ্যে রাজশাহী স্টেশন থেকে ২ হাজার ৪১৯ কেজি আম তোলা হয়।
চারঘাটের সারদা স্টেশন থেকে তোলা হয় ১ হাজার ৩১১ কেজি। আর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী স্টেশনে আম উঠেছে ২ হাজার ৬১৩ কেজি। ক’দিন পরই বাজারে প্রচুর আম উঠবে। যতদিন যাবে আম পরিবহনের এই পরিমাণ আরও বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম।
এদিকে, দ্বিতীয় বারের মতো পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাঁচটি ওয়াগন (মালগাড়ি) চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে ঢাকা রুটে চালু হলো একটি ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’। রাজশাহী থেকে মাত্র ১ টাকা ১৭ পয়সায় এই আম রাজধানী ঢাকায় পাঠাতে পারবেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। প্রতিটি ওয়াগনের ধারণক্ষমতা রয়েছে ৪৩ মেট্রিক টন। তবে আম বহন করা হবে ৩০ মেট্রিক টন। কাঁচা বা আধাপাকা আম যেন অতিরিক্ত গরম ও চাপে নষ্ট না হয়ে যায় সে কারণে ধারণক্ষমতার কিছু কম পণ্য বহন করা হচ্ছে।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (পাকশী) মো. নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী থেকে আমসহ অন্য কৃষিপণ্য পার্সেল পরিবহনের জন্য এবারও বিশেষ এই ট্রেনটি চালু করা হলো। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে যখন ঢাকা যাবে তখন ট্রেনটির নাম হবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-২’। আর ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফেরার পথে নাম হবে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন-১’। ট্রেনটি সপ্তাহে প্রতিদিনই চলাচল করবে।
ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনটি প্রতিদিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিকেল ৪টায় ছেড়ে আসবে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছাবে ৫টা ২০ মিনিটে। পণ্য তোলার জন্য ট্রেনটি এখানে ৩০ মিনিট বিরতি দেবে। বিকেল ৫টা ৫০ মিনিট মিনিটে ট্রেনটি আবারও ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে।
ট্রেনটি ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ২টায়। ঢাকা থেকে ট্রেনটি রাত ২টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে আসবে। রাজশাহী পৌঁছাবে সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে। এখানে ২০ মিনিট থেমে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। পৌঁছাবে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে। এক্ষেত্রে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকার বাজারগুলোতে তরজাতা ও সতেজ আম এবং শাক-সবজিসহ কৃষিজাত পণ্য পৌঁছানো সম্ভব হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসে ট্রেনটি আমনুরা বাইপাস, কাঁকনহাট, রাজশাহী, সরদহ, আড়ানি ও আব্দুলপুর বাইপাস স্টেশনে থামবে। এসব স্থানে আমসহ পার্সেল পণ্য ট্রেনে তোলা হবে।
এরপর যমুনার ওপারে থাকা টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, কালিয়াকৈর, জয়দেবপুর, টঙ্গী, ঢাকা বিমানবন্দর, ক্যান্টনমেন্ট, তেজগাঁও এবং কমলাপুর স্টেশনে থামবে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন।
ফেরার পথে ট্রেনটি রাজধানীর ঢাকার তেজগাঁও, টঙ্গী, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ, চাটমোহর এবং রাজশাহী স্টেশনে থামবে। তবে যাত্রাপথে কোথাও সাধারণ যাত্রী এ ট্রেনে তোলা হবে না।
এর আগে গত বছর ৫ জুন প্রথমবারের মতো এই রুটে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চালু করা হয়। গেল বছরের জুন-জুলাইয়ে মোট ৮৫৭ মেট্রিক টন আম ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনে পাঠানো হয়েছিল।
এতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের আয় হয় ৯ লাখ ২৯ হাজার ৮৬৯ টাকা। তবে এবার ঢাকা ছাড়াও খুলনা ও চট্টগ্রামের দিকে চাহিদা অনুযায়ী আম পাঠানো হবে। সেক্ষেত্রে ডেডিকেটেড ট্রেনে এসব পণ্য পাঠানো হবে। পরে এই বিষয়গুলো আলোচনা সাপক্ষে চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
ইউকে/এসই/এসএম