নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভায় সরকারি অর্থে কেনাকাটায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দকৃত অর্থে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সামগ্রী কেনার ক্ষেত্রে বাজারদরের তুলনায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি দামে পণ্য ক্রয় করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে। এমনকি নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করে উচ্চমানের হিসেবেও বিল দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, পৌরসভার জন্য ৫০০ পিস এলইডি বাল্ব কেনা হয়। প্রতিটি ১৫ ওয়াটের বাল্বের বাজার মূল্য যেখানে ২১৮ টাকা, সেখানে পৌরসভায় বিল দেখানো হয়েছে ৩১৮ টাকা দরে। তিন কয়েল (১.০) তার কেনা হয় প্রতি কয়েল ১৬ হাজার ২০০ টাকায়, যার বাজারদর প্রায় ৩ হাজার টাকা। এছাড়া ১০০ পিস লাইট হোল্ডার কেনা হয়েছে প্রতি পিস ২১০ টাকা দরে, যা বাজারে বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। ১০০ ওয়াটের ১৩টি ফ্লাড লাইট কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৬৪০ টাকা দরে, যদিও এর প্রকৃত দাম ৩ হাজার ২০০ টাকা। স্থানীয় সূত্রে দেওয়া তথ্য মতে, সেখানে সরবরাহ করা হয়েছে ৫০ ওয়াটের ফ্লাড লাইট। আর বিল দেখানো হয়েছে ১০০ ওয়াটের হিসেবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পৌরসভা সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আরএফকিউ পদ্ধতিতে একটা জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করতে গেলে এর সঙ্গে ১০ পার্সেন্ট ভ্যাট ও ৫ পার্সেন্ট আইটি যোগ হয়। একজন ভেন্ডরের মাধ্যমে একাধিক দরপত্র জমা দেওয়া হয় এবং সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়া হয়। তাই বাজারমূল্য ও বিলের অঙ্কে পার্থক্য থাকতেই পারে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, এভাবে নিয়মের আড়ালে সরকারি অর্থ লুটপাট চলছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। তারা অবিলম্বে স্বচ্ছ তদন্ত ও দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এদিকে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করায় নওহাটা পৌরসভা জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃর্ষ্টি হয়েছে। নওহাটা পৌরসভার সাবেক মেয়র মোকবুল হোসেন বলেন, তিনিও এই অভিযোগের বিষয়টি শুনেছেন। নওহাটা পৌরসভার সড়ক বাতির দাম বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দরে বিল করা হয়েছে। কিন্তু এগুলো তো আসলে ঠিক না। সরকারি টাকার যথাযথ ব্যবহার করতে হবে। তিনি যখন মেয়র ছিলেন ১০টা টাকাও এদিক সেদিক করতে দেন নি বলে এ সময় উল্লেখ করেন। তবে নানান কারণে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় আর আগের মত জবাবদিহিতা নেই। তাই এমন অনিময় হচ্ছে। বিষয়টি তাই গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার দাবি জানান।
আর সরকারি অর্থ ব্যবহারে জবাবদিহিতা ও শুদ্ধাচার থাকতে হবে জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহমুদুর রহমান বলেন, একটি পৌরসভার বিভিন্ন রাজস্ব আয়ের খাত রয়েছে, আবার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেও তারা পৌরসভার উন্নয়নে বরাদ্দ পায়। এগুলো দিয়ে পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়। কিন্ত এইরকম যদি হয়ে থাকে যে এক টাকার জিনিস তারা তিন টাকা দিয়ে ক্রয় করে অর্থ লোপাট করে- তাহলে এটি শুদ্ধাচার বহির্ভূত কাজ এবং এটি দুর্নীতির ভেতরে পড়ে। পৌরসভার বাসিন্দাদের উচিত এই সকল কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা।
পৌরসভার প্রশাসক এবং পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, আরএফকিউ পদ্ধতিতে একটা জিনিস ক্রয় বিক্রয় করতে গেলে এর সাথে দশ পার্সেন্ট ভ্যাট, ৫ পার্সেন্ট আইটি যোগ হয়। এছাড়া একজন ভেন্ডরের মাধ্যমে তিনজন ভেন্ডর এখানে কাগজ ড্রপ করেন। এর ভিতরে যিনি সরবনিম্ন দরদাতা থাকেন তিনি কাজ পান। সুতরাং আপনি আমি যে জিনিসটা একশো টাকায় বাজার থেকে কিনে আনতে পারছি আরএফকিউ পদ্ধতিতে সেটি হয় না। প্রশাসক বলেন, আরএফকিউ পদ্ধতিতে কাজ হয়েছে। এটাও একটা টেন্ডারের পদ্ধতি। এটি তখনই করা হয় যখন কোন জিনিস দ্রুত ভিত্তিতে কিনতে হয়, ওটিএম করতে গেলে কাগজে-কলমে এটা মানতে হয় ওটা মানতে হয়। এই বিষয়গুলোকে এড়িয়ে চলার সময় অনেক ক্ষেত্রে লোকাল মার্কেট থেকে অনেক কিছু ক্রয় করার জন্য আরএফকিউ করা যায়। তবে কোনো অনিয়ম হলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।
ইউকে/ওএস/এসই/আরএ