মরক্কান রূপকথার শেষ টেনে ফাইনালে ফ্রান্স 

ক্রীড়া বিভাগ: মরক্কো সেমিফাইনালে খেলবে- বিশ্বকাপ শুরুর আগে এমন কথা কেউ কল্পনাতেও ভেবেছিল? কিন্তু একের পর এক বিস্ময় উপহার দিয়ে প্রথম আফ্রিকান দল হিসেবে তারা উঠে এসেছিল সেমিফাইনালে। কিন্তু তাদের রূপকথা সেমিতেই থামিয়ে দিল ফ্রান্স।

সেই সঙ্গে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ফরাসিরা; যেখানে তাদের অপেক্ষা দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা।

আল বাইত স্টেডিয়ামে আজ ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ২-০ গোলে জয় পেয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা।

এই জয়ে ফাইনালের লাইনআপ চূড়ান্ত হয়ে গেল। আগামী ১৮ ডিসেম্বরের ফাইনালে আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হবেন এমবাপ্পেরা।

বাকি সব ম্যাচের মতো ফ্রান্সের বিপক্ষেও শুরু থেকে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপহার দিয়েছে মরক্কো। কিন্তু শুরুতে এক গোল হজম করেই সর্বনাশ হয় তাদের। গোলটি করেন ফরাসি ডিফেন্ডার থিও এরনঁদেজ। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে মরক্কানদের স্বপ্ন ভাঙেন তরুণ ফরাসি স্ট্রাইকার রন্দাল কোলো মুয়ানি।

কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত মরক্কোর জালে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় বল জড়াতে পারেননি। একটি গোল (কানাডার বিপক্ষে) হজম করেছিল তারা, সেটিও ছিল আত্মঘাতী। কিন্তু তাদের সেই মজবুত দুর্গ আজ পঞ্চম মিনিটেই ভেদ করল ফ্রান্স। ডান দিক থেকে ঢুকে আতোয়াঁ গ্রিজমানের দিকে বল বাড়ান রাফায়েল ভারানে। তার পাস থেকে বল পেয়ে শট নেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, কিন্তু শট রক্ষণের দেয়ালে বাধা পেয়ে ছয় গজ বক্সে থিও এরনঁদেজের সামনে পড়ে; আর তা থেকে গোল আদায় করে নেন ফরাসি ডিফেন্ডার।

থিও এরনঁদেজের গোলটি বিশ্বকাপ সেমিফাইনালের ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম (৪:৩৯) গোল। এর আগে ১৯৫৮ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে মাত্র দুই মিনিটের মধ্যেই লক্ষ্যভেদ করেছিলেন ব্রাজিলের ভাভা।

গোল হজম করার কিছুক্ষণের মধ্যেই শোধ করার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল মরক্কো। কিন্তু বক্সের সামনে থেকে মরক্কান মিডফিল্ডার উনাহির বাঁকানো শট ঝাঁপিয়ে ফেরান ফরাসি গোলরক্ষক হুগো লরিস। ১৭তম মিনিটে ব্যবধার আরও বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল ফ্রান্স। এবার লং বল ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হন মরক্কোর ডিফেন্ডার রোমাঁ সাইস।  বল তার মাথার ওপর দিয়ে চলে যায় অলিভিয়ের জিরুদের কাছে। বল নিয়ে কিছুটা দৌড়ে বাঁ পায়ে জোরালো শট নেন ফরাসি স্ট্রাইকার। কিন্তু অল্পের জন্য তার শটে বল পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।

খেলার ২০ মিনিট পার হওয়ার আগেই বড় ধাক্কা খায় মরক্কো। শুরু থেকেই অস্বস্তি নিয়ে খেলতে থাকা দলটির অধিনায়ক রোমাঁ সাইস ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন। তার বদলে নামেন মিডফিল্ডার সেলিম আমাল্লাহ। এরপর মরক্কোর খেলা কিছুটা অগোছালো হয়ে পড়ে। এই সুযোগে ফ্রান্স দুটি সুযোগ পেয়ে যায়। কিন্তু এমবাপ্পে ও জিরুদ দুজনেই জালের দেখা পেতে ব্যর্থ হন। বিরতির ঠিক আগে সমতা ফেরানোর সুযোগ পায় মরক্কো। কিন্তু এল ইয়ামিকের ওভারহেড কিক পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
<span;>দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আরও এক দুঃসংবাদ পায় মরক্কো। ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন দলটির আরেক ডিফেন্ডার নুসে মাসাওয়ি। তার বদলে নামানো হয় ইয়াহিয়া আত্তিয়াত আল্লাহকে। কিন্তু এই বদলের পর ফ্রান্সের রক্ষণে বেশ ভালোভাবেই চাপ বাড়ায় মরক্কো। তবে তাদের অধিকাংশ প্রচেষ্টা ফরাসিদের রক্ষণের দেয়ালে বাধা পায়।

মরক্কোর ম্যাচে ফেরার চেষ্টা কার্যত শেষ হয়ে যায় ৭৯তম মিনিটে। দারুণ এক গোলে মরক্কোকে ম্যাচ থেকেই ছিটকে দেন বদলি নামা ফরাসি স্ট্রাইকার রন্দাল কোলো মুয়ানি। এমবাপ্পের শট রক্ষণে বাধা পেলেও মুয়ানির সামনে পড়ে এবং ছয় গজ বক্স থেকে ক্যারিয়ারের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলটি আদায় করে নেন তিনি। বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে এটা দ্বিতীয় দ্রুততম গোল। বেঞ্চ থেকে মাঠে নামার ৪৪ সেকেন্ডেই গোল করেন তিনি। এর আগে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে নাইজেরিয়ার বিপক্ষে বদলি নামার ২৬ সেকেন্ডের মাথায় গোল করেছিলেন ডেনমার্কের এবে সান্ডে।

দুই গোল হজম করার পর মরক্কো আর ফিরতে পারেনি। ফলে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠার আনন্দ নিয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে হাকিম জিয়াচ- ইয়াসিন বুনোদের। তবে এতদূর আসাই তাদের জন্য অনেক বড় কীর্তি। যা ফুটবলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এ যাত্রায় তাদের বিদায় হয়েছে সম্ভাব্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হাতে। এবার ফ্রান্স বনাম আর্জেন্টিনা স্বপ্নের ফাইনাল দেখায় অপেক্ষা ফুটবলবিশ্ব।

ইউকে/এএস