এবার শ্রমবাজার চালু হচ্ছে লিবিয়ায়

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে আগামীকাল ২৫ অক্টোবর। এতে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে লিবিয়ায় কর্মী যাওয়া কমে যাবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

দীর্ঘ আট বছর বন্ধ থাকার পর এই শ্রমবাজারটি ফের বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত করা হচ্ছে। লিবিয়ায় ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। তবে দেশটিতে নানা অস্থিরতা শুরু হলে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকিতে ২০১৫ সালে কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগামীকাল ২৫ অক্টোবর লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে দেশটির শ্রমমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নিজ নিজ দেশের পক্ষ থেকে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। এ লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল লিবিয়ার উদ্দেশে রওনা হবে।

প্রতিনিধিদলে ইমরান আহমদ ছাড়াও রয়েছেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মোজাফফর, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মীর খায়রুল আলম ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর একান্ত সচিব (পিএস) যুগ্ম সচিব আহমদ কবির।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানাায়, সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে লিবিয়ার সরকারকে জানানো হবে যে সেখান থেকে ইউরোপে যাওয়ার জন্য যে মানবপাচারের ঘটনাগুলো ঘটে থাকে, সেটি যেন তারা কঠোরভাবে বন্ধ করে দেয়। কারণ মানবপাচারের এই ঘটনাগুলোতে বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যাই বেশি দেখা যায়। সূত্র জানায়, এই সমঝোতা চুক্তিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশে লিবিয়াকে যাতে ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে দুই দেশ একমত পোষণ করবে।

ভিজিট ভিসার নামে অবৈধভাবে ইউরোপে গমনের নেশায় কেউ যাতে লিবিয়ায় প্রবেশ না করে, সে ব্যাপারেও দুই দেশ একমত হতে যাচ্ছে। এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের পর লিবিয়ায় বৈধ পথে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

লিবিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ থাকার পরও বৈধ পথে লিবিয়ায় অল্পসংখ্যক কর্মী পাঠিয়েছে রিক্রুটিং এজেন্সি আজুর বেঙ্গল লিমিটেড। লিবিয়ার শ্রমবাজারের বর্তমান চিত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে এজেন্সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার কাজী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘লিবিয়ার শ্রমবাজারে এখনো বিরাট চাহিদা গড়ে ওঠেনি। এর কারণ এখনো সেখানকার নিরাপত্তাব্যবস্থা তেমন একটা উন্নত হয়নি। তিনি বলেন, ‘ওদের ওখানে কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভাগে ওদের কর্মী প্রয়োজন। আমরা এরই মধ্যে ডাক্তার-নার্স পাঠিয়েছি। এটার খুব চাহিদা আছে।’

এই সমঝোতা চুক্তির বিষয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। লিবিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, ‘লিবিয়ায় মানুষ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করতে যায়। সেখানে স্থায়ী হয়ে কাজ করার ব্যাপারটা নেই। ৭০-৮০ দশকে পেশাজীবীরা যেত। যুদ্ধ ও সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে আর কেউ কাজ করতে যায় না। কারণ সেখানে এখনো স্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।’

আসিফ মুনির বলেন, ‘যেহেতু সরকার লিবিয়ার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করছে, তাই এখন সরকারকে নিরাপত্তার জায়গাটা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি ওই রাজনৈতিক পরিস্থিতির সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে হবে।’

ইউকে/এএস