একক ভর্তিতে কঠোর ইউজিসি

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে প্রতি বছরই ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। জেলায় জেলায় পরীক্ষা দিতে গিয়ে যেমন খরচ হয়, তেমনই হয় ভোগান্তি। এ পরিস্থিতির সমাধানে কয়েক বছর ধরেই তৎপর সরকার। এ নিয়ে নানান উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে চালু করা হয় গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি। তাতে আসেনি স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। আবার গুচ্ছ পদ্ধতি চালু হলেও ‘মান-মর্যাদার’ অজুহাতে সে বলয়ের বাইরে থেকে গেছে বাংলাদেশে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

এবার স্বায়ত্তশাসন ও আভিজাত্যের ইতি ঘটছে। চালু হচ্ছে ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’। এক কাতারে আসছে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এতে ভর্তিচ্ছুরা একটি পরীক্ষায় অংশ নিলেই মেধার ভিত্তিতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একক এ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসি বলছে, দেশে বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫৬টি। এরমধ্যে একাডেমিক কার্যক্রম চালু রয়েছে ৫৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের যেমন চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়, তেমনি রাষ্ট্রীয় খরচও বাড়ে। ‘বিশৃঙ্খল’ এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) করা হবে। তবে এনটিএ বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ হওয়ায় আপাতত ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’ কাঠামো তৈরি করছে ইউজিসি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি। পদাধিকার বলে তিনি অধ্যাদেশ জারি করলেই সব বিশ্ববিদ্যালয় এক কাতারে আসতে বাধ্য। সে পথেই হাঁটছে সংস্থাটি।

শিক্ষকদের বাড়তি আয়ের বড় উৎস ভর্তি পরীক্ষা। একক ভর্তি পরীক্ষা হলে সে আয়ে ভাটা পড়বে। তাছাড়া বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তুলনামূলক ভালো শিক্ষার্থী পেয়ে থাকে। একক ভর্তি পরীক্ষায় তাতেও ভাটা পড়বে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভোগান্তি কমাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে অভিপ্রায় প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় অনুযায়ী, একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইউজিসিকে বিষয়টি নিয়ে কাজ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। এরপর ‘একক ভর্তি পরীক্ষা’ কীভাবে নেওয়া সম্ভব, তা ঠিক করতে ১৫ সদস্যের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে ইউজিসি। কমিটি একটি কাঠামো দাঁড় করিয়ে তা অধ্যাদেশ আকারে জারির জন্য সুপারিশ করবে। অধ্যাদেশে থাকবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি গঠনের সুস্পষ্ট নির্দেশনাও।

একক ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে যেভাবে

একবার পরীক্ষা দিলেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সবাই। একই সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে হবে, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভাগ পাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়েও অন্ধকারে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। খোদ ইউজিসির গঠিত ১৫ সদস্যের কমিটিও এ ব্যাপারে এখনো স্পষ্ট ধারণা দাঁড় করতে পারেনি। আগামী ২৬ অক্টোবর কমিটির বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইউজিসি সচিব ও একক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ড. ফেরদৌস জামান।

ইউজিসি সচিবের ভাষ্যমতে, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে ইউজিসি আন্তরিক। অধ্যাদেশ জারি হলে সেটি সম্ভব। এরমধ্যে আমরা কাঠামো দাঁড় করাবো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রাথমিক একটি ধারণা দিয়েছেন তিনি। ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এখানে তো মেডিকেলে ভর্তির মতো একটা পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়। স্বাভাবিক ধারণা অনুযায়ী, বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের পৃথকভাবে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন অনুষদ থাকে। কলা, বিজ্ঞান, কৃষি, প্রকৌশল, সামাজিক বিজ্ঞান, আইন প্রভৃতি। সেগুলো অনুসরণ করেও চারটি ভাগে ভাগ করে বা আরও দু-একটি ইউনিট করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে একই সুরে কথা বলেছেন ভর্তি কমিটির সদস্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে আমরা বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্যে ভাগ করে পরীক্ষা নিয়ে তিনবার ভর্তি করালাম। তেমন সমস্যা তো দেখছি না। একইভাবে তিন-চারটা ইউনিট করে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। সেখানে কোন ইউনিটে কারা আবেদন করতে পারবে, সেই নির্দেশনা দেওয়া থাকলে সমস্যা থাকবে না।

বুয়েট-স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ‘পিছুটান’

সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়। সেগুলো হলো- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এ চার বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালে প্রণীত অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরিচালিত হয়। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন। নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেকটি বিভাগ নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থী ভর্তি করবে’। অধ্যাদেশের এ ধারাকে ব্যবহার করে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতেও আসেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। একই সঙ্গে মান-মর্যাদার কথা বলে বাইরে থাকতে চায় বুয়েটও।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় নিজেরা ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায়। তারা তুলনামূলক ছোট এবং নবীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে আসতে চায় না। বুয়েটও বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটা অবস্থান নিয়ে থাকে। এজন্য একক ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রয়োজন। এ অধ্যাদেশ জারি হলে কেউ কোনো আপত্তি করতে পারবে না। একক ভর্তি পরীক্ষায় আসতে বাধ্য থাকবে।

ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের একাডেমিক কমিটির সদস্য এমন পাঁচজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। একক ভর্তি পরীক্ষায় আসতে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাধা কোথায়—এমন প্রশ্নে তারা জানান, শিক্ষকদের বাড়তি আয়ের বড় উৎস ভর্তি পরীক্ষা। একক ভর্তি পরীক্ষা হলে সে আয়ে ভাটা পড়বে। তাছাড়া বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তুলনামূলক ভালো শিক্ষার্থী পেয়ে থাকে। একক ভর্তি পরীক্ষায় তাতেও ভাটা পড়বে। এখানে যত ভালো পদ্ধতিই আনা হোক, সব বিশ্ববিদ্যালয় মিশ্র প্রকৃতির শিক্ষার্থী পাবে। অর্থাৎ, ভালো-খারাপ দুটিই থাকবে।

বুয়েটের একাডেমিক কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমাদের এখানে শুধুই জিপিএ-৫ বা গোল্ডেন জিপিএ-৫ পাওয়ারা ভর্তি হয়। একক ভর্তি প্রক্রিয়ায় সেটা টিকিয়ে রাখাও কষ্টসাধ্য হবে। সর্বজনীন একটা মানদণ্ডে ভর্তি নিতে হবে।

যেহেতু রাষ্ট্রপতি একক ভর্তি পরীক্ষা চেয়েছেন, সেখানে আর কিছু বলার থাকে না। যদি অধ্যাদেশ জারি হয়, তখন অবশ্যই সেখানে যেতে বাধ্য আমরা। ইউজিসিতে মিটিংয়ের পর নিজেরাও (ভর্তি কমিটি) বৈঠক করেছি। একাডেমিক কাউন্সিলেও বিষয়টি উঠবে। সেখান থেকে মতামত নেওয়া হবে।

ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক বলেন, রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে তো আর কথাই নেই। যতক্ষণ তা না হচ্ছে, ততক্ষণ উপাচার্যের ওপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে থেকেও একটা চাপ থাকবে। একাডেমিক কমিটি, অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতিরা সবাই এটা যাতে না হয়, সেটার পক্ষে থাকবে। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি একক ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়নে চাপ দিচ্ছে। সেদিক বিবেচনায় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্বিমুখী চাপে পড়েছে।

স্বায়ত্তশাসিত চারটি বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটের উপাচার্যও রয়েছেন ইউজিসির একক ভর্তি পরীক্ষা প্রণয়ন কমিটিতে। সর্বশেষ বৈঠকে তারা আরও দু-তিন বছর পর এটি চালুর বিষয়ে মত দেন। রাষ্ট্রপতির অভিপ্রায় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের কারণে একক ভর্তি পরীক্ষার বাইরে থাকার কথা স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না তারা। তবে এখনো ‘পিছুটান’ রয়েছে তাদের।

একক ভর্তি কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আমরা একটা অধ্যাদেশ (১৯৭৩ সালের) মেনে চলি। আমাদের একাডেমিক কমিটি আছে। সেখানে মতামত নেওয়ার বিষয় থাকে। যেহেতু রাষ্ট্রপতি একক ভর্তি পরীক্ষা চেয়েছেন, সেখানে আর কিছু বলার থাকে না। যদি অধ্যাদেশ জারি হয়, তখন অবশ্যই সেখানে যেতে বাধ্য আমরা। ইউজিসিতে মিটিংয়ের পর নিজেরাও (ভর্তি কমিটি) বৈঠক করেছি। একাডেমিক কাউন্সিলেও বিষয়টি উঠবে। সেখান থেকে মতামত নেওয়া হবে।

ইউজিসির একক ভর্তি পরীক্ষা প্রণয়ন কমিটির বৈঠকগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অংশ নেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। আগামী ৪ নভেম্বর তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করবেন। ড. মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন মেনে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে সেটাও আইনে পরিণত হবে। ভিন্ন মত বা চিন্তা থাকলেও সেটা মেনে চলতে আমরা বাধ্য। তখন আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন পরীক্ষার মানটা ভালো হয়, যাচাই প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছ হয়।

বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য একক ভর্তি পরীক্ষায় আসা বা না আসা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাদের ভাষ্য, বিষয়টি নিয়ে বলার মতো কিছু নেই। তারা কমিটিতে থাকলেও নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির সিদ্ধান্তও ইউজিসিকে জানাবেন।

পেছাতে পারে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি

স্বাভাবিক সময়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগস্ট-সেপ্টেম্বরে আবেদন নিয়ে থাকে। অক্টোবর-নভেম্বরে পরীক্ষা এবং ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি শেষ করে। জানুয়ারিতে বছরের শুরুতে ক্লাস শুরু হয়। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এ সময়সূচিতে ভাটা পড়ে। এলোমেলো হয় সময়সূচি। এবার ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়েছে ১৬ আগস্ট। রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কাছাকাছি সময়ে ক্লাস শুরু হয়। তিনটি গুচ্ছের ৩৩ বিশ্ববিদ্যালয়ে আগস্টের শেষ দিকে ক্লাস শুরু হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলে আসছে, করোনার কারণে একাডেমিক ক্যালেন্ডার এলোমোলো হয়। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে উচ্চশিক্ষাসহ সব স্তরকে আগের সময়সূচিতে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে। তবে একক ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে গেলে সময়সূচি আরও পিছিয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ১৭ আগস্ট। শেষ হয় ৪ অক্টোবর। ৬০ দিনের বাধ্যবাধকতা মেনে ৩০ নভেম্বর ফল প্রকাশের সম্ভাব্য তারিখ জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এইচএসসির ফল প্রকাশের পর শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরে ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা।

ইউজিসি সূত্র ও একক ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, একক ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ হলেও প্রস্তুতি নিতে সময় লাগবে। সেক্ষেত্রে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়াও পেছাতে পারে।

ভর্তি পরীক্ষার সম্ভাব্য সময়সূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এটা নিয়ে কোনো আলাপ হয়নি। এটা আমি বা কেউই হয়তো বলতে পারবেন না।

একই কথা জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তারা প্রত্যেকে ভর্তি কমিটির সদস্য।

তবে নাম প্রকাশ না করে ভর্তি কমিটির সদস্য ও স্বায়ত্তশাসিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বলেন, ইউজিসি ও ভর্তি কমিটি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে আন্তরিক। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এ পদ্ধতি এবার চালু করতে গেলে সময়সূচি আরও পিছিয়ে যেতে পারে। ক্লাস শুরু করতে হয়তো ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ‘মিশ্র’ প্রতিক্রিয়া

একক ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা চলছে এক বছর ধরে। তবে তা শিক্ষার্থী-অভিভাবক পর্যায়ে পৌঁছেছে চলতি মাসে। ইউজিসি রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারির সুপারিশের পর গণমাধ্যমে খবরটি প্রচার হয়। ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নিতে শুরু করেছেন। তারা এ পর্যন্ত যতটুকু জেনেছেন, তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।

ইউজিসি ও ভর্তি কমিটি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে আন্তরিক। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এ পদ্ধতি এবার চালু করতে গেলে সময়সূচি আরও পিছিয়ে যেতে পারে। ক্লাস শুরু করতে হয়তো ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।

নটর ডেম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শিহাব কায়সার। তার বাবা ওয়াহাব কায়সার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে বেশি টেনশন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাটা জটিল প্রক্রিয়ার। মিডিয়ায় খবর দেখছি, একবার পরীক্ষা দিলেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া যাবে। প্রশ্ন কেমন হবে, কীভাবে পরীক্ষা হবে; তা তো এখনো সরকার জানায়নি। ছেলে বারবার জিজ্ঞেস করছে। অন্যদের থেকে জানারও চেষ্টা করছে। সব মিলিয়ে এখনই একটা উদ্বেগ কাজ করছে।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার ছাত্রী নুরুন্নাহার লিনা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার টার্গেট ছিল ঢাবি ও বুয়েট। এখন শুনছি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পরীক্ষা। আমি কীভাবে চয়েজ দিলে ঢাবি বা বুয়েটে ভর্তি হতে পারবো, সেটা বুঝতে পারছি না। দ্রুত এটা স্পষ্ট করলে আমাদের জন্য ভালো হয়।

নুরুন্নাহার লিনার মা আয়েশা বেগম বলেন, দেড় সপ্তাহ ধরে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমাদের বাসায় সারাক্ষণ আলাপ চলছে। ওর বাবার কাছে এটা-ওটা জানতে চায় ও। ওর বাবা বলে সেও কিছু জানে না। পত্রিকায় খোঁজে, গুগলে সার্চ করে। ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভয়-ভীতিতে পড়ে গেছে ও।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে একক ভর্তি পরীক্ষা চালুর বিষয়ে ইউজিসি আন্তরিক। মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অধ্যাদেশ জারির জন্য সুপারিশের সিদ্ধান্তও হয়েছে। ২৬ অক্টোবর কমিটির আরেকটি বৈঠক হবে। সেখান থেকে সব বিষয় স্পষ্ট হতে পারে।

পরীক্ষা পদ্ধতি ও সময়সূচি নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্বেগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোনো পদ্ধতি শতভাগ বিশুদ্ধ নয়। একেবারে ব্যাকরণ মেনে চলতেও পারে না। কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। সেগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান হবে। দ্রুত শিক্ষার্থীদের পুরো প্রক্রিয়া জানিয়ে দেওয়া হবে।

ইউকে/এএস