‘কুকুরের আচরণ দেখে’ আনসার দলনেত্রী আশার খুনি শনাক্ত

বগুড়া সংবাদদাতা: বগুড়ার শিবগঞ্জে আনসার ভিডিপি দলনেত্রী আশা দেবী মোহন্ত (৩১) হত্যা রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। এলাকার ‘কুকুরের শান্ত আচরণ দেখে’ পুলিশ তার খুনি পরকীয়া প্রেমিক নয়ন ইসলামকে (২৩) গ্রেফতার করেছে। বিয়ে করা নিয়ে মনোমালিন্য ও প্রেমের ঘটনা ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় সে ঘরে ঢুকে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।

বুধবার নয়ন বগুড়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুকান্ত সাহার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিজ কার‌্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দেন।

প্রেসব্রিফিং ও এজাহার সূত্র জানায়, নিহত আশা দেবী মোহন্ত বগুড়ার আদমদীঘির নশরতপুর বাজারের মৃত কাঞ্চন মোহনের মেয়ে। আশা শিবগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের আনসার ভিডিপির দলনেত্রী। প্রায় ১৩ বছর আগে শিবগঞ্জ পৌরসভার বানাইল এলাকার নীল কমল মোহন্তের ছেলে মুদি দোকানি ভজন কুমার মোহন্তের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সংসার জীবনে তার মৃত মেয়েসন্তান হয়।

গত ৮-৯ মাস আগে বানাইল পশ্চিমপাড়ার রমজান আলীর ছেলে নয়ন ইসলামের সঙ্গে আশার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের মধ্যে অন্তরঙ্গ সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। নয়ন প্রায় তিন মাস আগে বিয়ে করেন। এরপর তিনি আশার সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দেন। এতে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য ও দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। প্রেম ও অনৈতিক সম্পর্ক ফাঁস হওয়ার আশঙ্কায় নয়ন তাকে (আশা) হত্যার পরিকল্পনা করেন।

এদিকে আনসার ভিডিপি দলনেত্রী আশা দেবী মোহন্ত বানাইল উত্তরপাড়া সার্বজনীন পূজামণ্ডপে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। ২৩ নভেম্বর নবমীর রাত ১০টার দিকে তিনি নিকটস্থ বাড়িতে পোশাক পরিবর্তনের জন্য যান। এ সময় তার শাশুড়ি সুপ্রীতি রানী মোহন্ত ও জা রত্না রানী মোহন্ত মণ্ডপে ও স্বামী ভজন কুমার মোহন্ত দোকানে ছিলেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে শাশুড়ি ও জা বাড়িতে ফিরে প্রধান দরজা বন্ধ পান। ডাকাডাকি করে আশার সাড়া না পাওয়ায় পেছনের দরজা দিয়ে বাড়িতে ঢোকেন।

এ সময় তারা আশার মৃতদেহ ঘরের মেঝেতে সোফার পাশে গলায় ওড়না পেঁচানো ও মোবাইল ফোনের চার্জারের তার মুখে পেঁচানো থাকতে দেখেন। এ ব্যাপারে মৃতের মা সন্ধ্যা রানী মোহন্ত শিবগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

পুলিশ সুপার প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, আনসার দলনেত্রী আশা রানী মোহন্ত হত্যাকাণ্ডের পর ঘাতককে গ্রেফতারে প্রযুক্তির আশ্রয় নেওয়া হয়। ঘটনার রাতে এলাকার কুকুরের শান্ত আচরণ দেখে নিশ্চিত হন যে, পরিচিত কেউ বাড়িতে ঢুকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ২৪ অক্টোবর রাত সোয়া ১টার দিকে বানাইল পশ্চিমপাড়ার বাড়ি থেকে রমজান আলীর ছেলে পরকীয়া প্রেমিক নয়ন ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।

২৫ অক্টোবর নয়ন ইসলাম আদালত ও পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিকে জানিয়েছেন, গত ২৩ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে আশা আনসারের পোশাক পরিবর্তনের জন্য বাড়িতে যাচ্ছিল। তখন তার সঙ্গে উপজেলা পরিষদের গেটের কাছে দেখা হয়। আশা বাড়িতে ঢুকে প্রধান দরজা বন্ধ করে দেন। তখন নয়ন ইটের প্রাচীর টপকিয়ে বাড়িতে ঢুকে আশার ঘরে যায়। আনসারের পোশাক পরিবর্তনের সময় নয়নকে ঘরে দেখে আশা রেগে যান। পরে নয়ন ফুসলিয়ে আশার সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক করে। নয়ন বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় আশার দুই হাতে পিছন থেকে বেঁধে ফেলে। এরপর সোফায় থাকা ফোন চার্জারের কেবল দিয়ে মুখ পেঁচিয়ে গলায় ওড়নার ফাঁস দেয়। এতে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আশা মারা গেলে লাশ সোফার পাশে ফেলে নয়ন বাড়ির প্রাচীর টপকিয়ে পালিয়ে যায়।

আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর নয়ন ইসলামকে বগুড়া জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরপরই আদালতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আশা দেবী মোহন্ত হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা হবে। এর আগে তার নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ও শিবগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় টিম তদন্ত করবে।

ইউকে/টিএম/এএস