শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন: পরিবার থেকেই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন রোধে পরিবারিক সচেতনতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কারণ অধিক সংখ্যক ঘটনায় শিশু পরিবারের মধ্যেই প্রথম নিকটাত্মীয়ের কাছে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু সচেতনতার অভাবে অনেকেই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছেন না। আবার যারা পারছেন তারা মানসম্মানের ভয়ে প্রতিরোধ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। তাই শিশুর প্রতি যৌন নির্যাতন রোধে পরিবার থেকে সামাজিক এবং সমাজ থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

আজ শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ১০টায় রাজশাহীর হোটেল ‘এক্স’ এর কনফারেন্স কক্ষে শিশুদের যৌন শোষণের মাত্রা, পরিধি এবং প্রেক্ষাপটের ওপর আলোকপাতসহ এবং বাংলাদেশে শিশুদের যৌন শোষণ রোধে করণীয় নির্ধারণের ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে লক্ষ্যে ‘অংশীজন সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপস্থিত অংশীজনরা এমনই অভিমত ব্যক্ত করেন।

ডাচ মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স, নেদারল্যান্ডস এবং ফ্রি অ্যা গার্ল নেদারল্যান্ডস’র সহযোগিতায় ডাউন টু জিরো অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ (স্টেপিং আপ দ্য ফাইট অ্যাগেইনস্ট চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাক্সপ্লয়টেশন) প্রকল্পের আওতায় এই সংলাপ হয়। রাজশাহীর বেসরকারি উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্যুনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি) এই সংলাপের আয়োজন করে।

সংলাপে উন্নয়ন কর্মী সুব্রত পালের সঞ্চালনায় শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, এসিডি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর শারমিন সুবরিনা। অন্যদিকে এসিডি প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর অংশগ্রহণকারীদের সামনে প্রকল্পের লক্ষ্য এবং কর্মসূচীর কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের প্রফেসর ড.রবিউল ইসলাম অংশীজন সংলাপে বাংলাদেশের শিশুদের যৌন শোষণের মাত্রা, পরিধি এবং প্রেক্ষাপটের ওপর আলোকপাত করার পাশাপাশি এবং বাংলাদেশে শিশুদের যৌন শোষণ দূর করার জন্য করণীয়সহ সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারের সদস্যের দ্বারা ২৮ শতাংশ, দালালদের দ্বারা ৪৫ শতাংশ, ছেলে বন্ধুদের দ্বারা ১৭ শতাংশ এবং প্রতিবেশী ও আত্বীয়দের দ্বারা ৮ শতাংশ কন্যাশিশু যৌন নির্যাতন ও শোষণের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে যৌন শোষণের কারণ হিসেবে বিচ্ছিন্ন পরিবার, দরিদ্রতা, বেকারত্ব, পাচার, ফাঁদ, শিক্ষা সংক্রান্ত কারিকুলামে যৌন শোষণের প্রকৃতি নিয়ে কম গুরুত্ব দেওয়া, জনসচেতনতা ও তথ্যের অভাব এবং সীমাবদ্ধতা, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা,অবিশ্বাস এবং কার্যকর আইনি পরামর্শ ও প্রক্রিয়ায় ঘাটতি বা অভাবে মতো বিষয়গুলো ঘটে বলে মাঠ পর্যায়ে পরিচালিত সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।

অংশীজন সংলাপে বক্তারা বলেন, সরকার শিশুর জন্য একটি মানবিক পরিবেশ তৈরীতে বদ্ধ পরিকর। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের সাথে সংগতি রেখে শিশুর মেধা বিকাশে কাজ করছে। তারপরও আমরা শিশুর ওপর সহিংসতা ও যৌন শোষণের চিত্র অনেক সময় দেখতে পাই। শিশুদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরীতে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

অংশীজন সংলাপে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এটিএম গোলাম মাহবুব। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহকারি পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম, সুজনের সভাপতি সফিউদ্দিন আহমেদ, বাংলানিউজ টোয়ন্টিফোরের সিনিয়ন করেসপন্ডেন্ট শরীফ সুমন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের সমাজ সেবা কর্মকতা ড. হামিদুল ইসলাম, স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট শামসুন নাহার মুক্তি, ব্লাস্টের সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সামিনা বেগমসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা শিশুর ওপর যৌন শোষণ রোধে বিভিন্ন কার্যক্রম পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করা, কেন শিশুর ওপর যৌন নির্যাতন বাড়ছে তা নিয়ে গবেষণা করা, অনলাইন অপব্যববাহার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শিশুবিবাহ বন্ধের আহ্বান জানান।

ইউকে/এএস