রাজশাহীতে মৃত্যু বাড়লেও কমছে সংক্রমণ

বিশেষ প্রতিবেদক: রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক দিনের ব্যবধানে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে- হাসপাতালের ভেতরে মৃত্যু বাড়লেও বাইরের সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে। অন্ততঃ গত কয়েক দিনের পরিসংখ্যান তা-ই বলছে। দেখা গেছে- ধীরে ধীরে শনাক্তের হার নিম্নমুখী হচ্ছে। এতে দেরিতে হলেও রাজশাহীতে গত ১১ জুন থেকে চলমান ‘কঠোর লকডাউন’র সুফল আসতে শুরু করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন- স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে গতকাল রোববার (২৭ জুন) মোট ৫৬২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৪৯ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। সংক্রমণের হার রাজশাহীতে ২৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। এর আগে গত শনিবার (২৬ জুন) রাজশাহীর দুটি পিসিআর ল্যাবে ৫৬১টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩৪ জনের নমুনায় করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এতে রাজশাহীতে শনাক্তের হার গত শুক্রবারের (২৫ জুন) ৩৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ থেকে কমে ২৯ দশমিক ০৮ শতাংশ হয়েছিল। এছাড়া পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের করোনা শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৭২ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৯০ শতাংশে এসেছিল। ফলে করোনা নমুনা পরীক্ষার এই পরিসংখ্যানই বলছে- রামেক হাসপাতালে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও ধীরে ধীরে সংক্রমণের চূড়ায় থাকা ভারত সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছে।

সোমবার (২৮ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা চিকিৎসা পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন- হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। এ সময় সংক্রমণ কমছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতাল পরিচালক বলেন- মৃত্যুর হার বাড়লেও সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে এখনই তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। রাজশাহীতে চলমান ‘কঠোর লকডাউন’র কারণে এটি হতে পারে। তবে আরও কয়েকটি দিন গেলে মৃত্যু ও সংক্রমণের হার এনালাইসিস করে এ বিষয়টি আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যাবে। আর তখনই বলা যাবে হ্যাঁ ‘রাজশাহীতে সংক্রমণ কমছে’। যোগ করেন হাসপাতাল পরিচালক।

এসময় উল্লেখ করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন- যারা মারা যাচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই গ্রামের। শহরের মানুষও মারা যাচ্ছেন তবে তার সংখ্যা গ্রামের তুলনায় কম। হাসপাতালে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের অক্সিজেন স্যাচুরেশন পার্সেন্টেজ ৯২ বা তারও নিচে। তাদের মধ্যে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরপরই মারা যাচ্ছেন। যে কারণে মৃত্যুর সংখ্যা এখনও কমছে না। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালের করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭৮ জন। এরমধ্যে শুধু রাজশাহীরই ৫২ জন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১০ জন, নাটোরের ৮ জন, নওগাঁর ৪ জন, পাবনা জেলার ২ জন ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ২ জন রয়েছেন। সব মিলিয়ে সোমবার (২৮ জুন) সকাল ৮টা পর্যন্ত করোনা উপসর্গ ও আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোট ৪৪২ জন রোগী ভর্তি আছেন। তাই মৃত্যু ও সংক্রমণের হার একইভাবে কমলে তখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে রাজশাহীতে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে এসেছে। এর আগে নয়।

এদিকে, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে একদিনের ব্যবধানে আবারও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার (২৭ জুন) সকাল ৮টা থেকে সোমবার (২৮ জুন) সকাল ৮টার মধ্যে বিভিন্ন সময় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এর আগের দিন মৃত্যু হয়েছিল ১০ জনের।

মৃত ১৪ জনের মধ্যে ৭ জনই করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ৭ জন রোগী করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তাদের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে ৭ জন রাজশাহী জেলার, ৫ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার, ১ জন নাটোর জেলার ও ১ জন নওগাঁ জেলার রোগী ছিলেন। আজকের এ মৃত্যু নিয়ে চলতি মাসের এই ২৮ দিনে (১ জুন সকাল ৮টা থেকে ২৮ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত) রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন ৩১৮ জন। বর্তমানে করোনা উপসর্গ ও আক্রান্ত হয়ে রামেক হাসপাতালে মোট ৪৪২ জন ভর্তি রোগী আছেন। অথচ বাড়ানের পরও করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড শয্যা সংখ্যা ৪০৫টি। রোববার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন যুক্ত করে এই ওয়ার্ডটিও কোভিড ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডের শয্যা সংখ্যা ৪৮টি।

আগে হাসাপাতালের ডেডিকেটেড শয্যা সংখ্যা ছিল ৩৫৭টি। এর সাথে ৪৮টি শয্যা বেড়ে ৪০৫টি দাঁড়ালো। এর পরও ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন। ৪০৫ জনকে বেড দেওয়া গেলেও বাকিরা হাসপাতালের মেঝেতে এবং ওয়ার্ডের বারান্দায় শুয়ে কোনোভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

ইউকে/এসএম