বগুড়ায় ভুট্টা চাষে লাভবান চাষিরা

বার্তাকক্ষ প্রতিবেদন: বগুড়া জেলায় এ বছর রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে ভুট্টা চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছেন চাষিরা। জেলার ১২টি উপজেলায় প্রায় ১৬৩ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকার ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে।

শুক্রবার (২৭ আগস্ট) জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান এই পরিসংখ্যান দেন।

বগুড়া জেলার তিনটি উপজেলা (সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট) যমুনা নদী বেষ্টিত। এরমধ্যে সারিয়াকান্দির প্রায় সাতটি, সোনাতলার তিনটি ও ধুনটের একটি ইউনিয়ন পুরোপুরি যমুনায় ঘেরা। এ তিন উপজেলাসহ জেলার কয়েকটি উপজেলায় অনেক কৃষক নিয়মিতভাবেই তাদের ফসলি জমিতে প্রতিবছর ভুট্টা চাষ করে থাকেন। জীবিকার তাগিদে এই ফসলের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল তারা। জেলার শাজাহানপুর, শেরপুর, সারিয়াকান্দিসহ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতবারের মতো বগুড়ায় এ বছর রোগবালাই তেমন ক্ষতি করতে পারেনি ফসলের। ফসলও গত বছরের তুলনায় ভালো হয়েছে। এ ফসল উৎপাদনে কৃষক ত্রিমুখীভাবে লাভবান হয়ে থাকেন। কেন না জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায় ভুট্টা ফল ব্যতিত বাকি অংশ। এছাড়া গো-খাদ্যের জন্যেও উপযুক্ত ভুট্টা গাছ।

চাষিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা যায়, জমি প্রস্তুত করতে বীজ, সার, পানি, গাছ লাগানো, শ্রমিক, মজুরি, কাটা-মাড়াইসহ প্রতি বিঘায় তাদের খরচ হয় সর্বোচ্চ ১০-১৪ হাজার টাকা। এরমধ্যে প্রতিবিঘায় ভুট্টা উৎপাদন হয় গড়ে ৩০-৪৫ মণ। তারা প্রতিমণ শুকনো ভুট্টা বাজারে বিক্রি করছেন ৭৫০-৮৫০ টাকা এবং একটু ভেজা ভুট্টা বিক্রি করছেন ৫৫০-৬০০ টাকা।

সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার কৃষক আহসানুল হক ও সবেদ আলী জানান, এ উপজেলাগুলোর চরাঞ্চলে ব্যাপক পরিসরে ভুট্টা চাষ হয়ে থাকে। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে তাদের টিকে থাকতে হয়। কেন না চরের পলি বা বেলে যুক্ত মাটি সাধারণত পানি ধরে রাখতে পারে না। পানির স্তরও তেমন একটা ভালো না। তাই স্বল্প সেচের ফসল চরের মাটিতে চাষের চিন্তা করতে হয় তাদের। তারা আরও জানান, স্বল্প সেচের ফসলের কথা চিন্তা করে ও নিজেদের ভাগ্য বদলে ভুট্টা বেছে নেন তারা। এ ফসল ধানের তুলনায় লাভ জনক। ফলনও বেশ ভাল হয়। প্রায় সময়ই বাজারে দাম ভাল থাকে এ ফসলের।

জানা যায়, কিছু বছর আগে থেকে চরাঞ্চলের কৃষকরা অল্প অল্প করে ভুট্টার আবাদ শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে চাষের জমির পরিধি বাড়িয়ে নেন তারা। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছরও চরের অনেক জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন চরাঞ্চলের চাষিরা।

শাজাহানপুর উপজেলার কোরবান আলী জানান, রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে তিনি মোট ১৪ বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। জমির উৎপাদিত ফসলের সিংহ ভাগ ঘরে তুলেছেন ও বাজারজাত করেছেন। বাকি অল্প কিছু জমির ফসলের কাজ শেষ করতে কয়েকদিন সময়ের প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, তার বাপ দাদা ভুট্টা চাষ করতেন। এ ফসল মানুষের নানা ধরনের খাদ্য ও শিল্পজাত ছাড়াও বহুবিধ কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। তাই তারা এটিকে বাদ দিয়ে অন্য ফসলের চিন্তা করতে পারেন না। তিনি ভুট্টার ফল ব্যতিত বাকি অংশ ও ভুট্টার গাছ গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বলেন, এ জেলার কয়েকটি উপজেলায় রবি মৌসুমে ৮ হাজার ৩৫৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করেন চাষিরা। খরিপ-১ ও ২ মৌসুমে মোট ৭০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়। রবি মৌসুমে যার মোট উৎপাদন লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৮৩ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন এবং খরিপে-১ মৌসুমে ৩৩০ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন। যার গড় বাজারমূল্য প্রায় ১৬৩ কোটি ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা।

তিনি আরও বলেন, এ জেলায় রবি মৌসুমে ভুট্টার চাষ শুরু করা হয় ২ অক্টোবর থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে। এ ফসল কৃষকের ঘরে উঠতে সময় লাগে ৫ থেকে ৬ মাস। খরিপ মৌসুমের চাষাবাদ শুরু হয় দুই ধাপে। এর মধ্যে খরিপ-১ এর চাষ শুরু হয় ১৬ মার্চ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে এবং খরিপ-২ এর চাষ শুরু হয় ১ জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে।

খরিপ মৌসুমে ভুট্টার এ আবাদ উঠতে মোটামুটি ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগে। উৎপাদন বেশি ও ভালো দাম পাওয়ায় এ জেলার কৃষকরা আস্তে আস্তে ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইউকে/এএস