রাজার শহরে জ্বলছে ‘রাজমুকুট’

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীকে বলা হয় প্রাচীন জনপদ। এটি ছিল রাজাদের শহর। প্রাচীন বাংলার পুন্ড্র সাম্রাজ্যের একটি অংশ। বিখ্যাত সেন বংশের রাজা বিজয় সেনের সময়ের রাজধানী বর্তমান রাজশাহী শহর থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছিল। মধ্যযুগে বর্তমান রাজশাহী পরিচিত ছিল রামপুর বোয়ালিয়া নামে। এর সূত্র ধরে এখনও রাজশাহী শহরের একটি থানার নাম বোয়ালিয়া। রাজশাহী নামকরণ নিয়ে এমন অনেক মতপার্থক্য রয়েছে। তবে অনেকেই এই শহরকে বলে ‘রাজার শহর’।

তাই বিভাগীয় এই শহরে অল্প সময়েই জনপ্রিয়তা পাওয়া প্রজাপতি সড়কবাতির পর এবার নতুন চমক ‘রাজমুকুট’। রাজশাহী মহানগরীর কল্পনা সিনেমা হলের মোড় (স্বচ্ছ টাওয়ার) থেকে তালাইমারী পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার ফোরলেন সড়কে বসানো হয়েছে- নান্দনিক সড়কবাতি ‘রাজমুকুট’।

গত ১৩ মার্চ রাত থেকে কল্পনার মোড় থেকে তালাইমারী পর্যন্ত সড়কটিতে আধুনিক এ সড়কবাতি বসানোর কাজ শুরু হয়। এরপর স্থাপনকাজ শেষে ২৭ মার্চ রাতে তা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সড়কবাতিতে ঝলমলে হলো রাজশাহীর আরও একটি সড়ক। উদ্বোধনের পর তার ছবি এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। বিশেষ করে রাজশাহীর সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ এসব ছবি নিজের ফেসবুক ওয়ালে দিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখার বরাত দিয়ে জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজ মিশু জানান, ১২৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী মহানগরীর কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ প্রকল্পের আতওায় এই দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি বসানো হয়েছে।

মহানগরীর কল্পনা সিনেমা হলের মোড় থেকে তালাইমারী পর্যন্ত সড়ক ফোরলেনে উন্নীত করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সড়কটি প্রশস্তকরণের পর সড়কের আইল্যান্ডে বসানো হয়েছে ১৩০টি আধুনিক সড়কবাতির দৃষ্টিনন্দন পোল। প্রতিটি পোলের মাথায় লাগানো হয়েছে ১৩টি আধুনিক লাইট। এছাড়া সড়ক সংলগ্ন বাঁধে স্থাপন করা হয়েছে ১৮০টি আধুনিক সুদৃশ্য গার্ডেন লাইটের পোল।

প্রতিটি পোলে রয়েছে ৫টি অত্যাধুনিক লাইট। অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলবে ও নিভবে। মহানগরীর কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী পর্যন্ত সড়ক আলোকায়নে ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম তুষার জানান, সম্প্রতি আলিফ লাম মিম ভাটার মোড় থেকে ছোট বনগ্রাম, মেহেরচন্ডী, বুধপাড়া, মোহনপুর রেলক্রসিং হয়ে বিহাস পর্যন্ত রাজশাহী-নাটোর সড়ক পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিমমুখী ৬ দশমিক ৭৯৩ কিলোমিটার চার লেন সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। সড়কের দুই পাশে ফুটপাত, একটি ব্রিজ, আটটি কালভার্ট, মিডিয়ান ও ট্রাফিক কাঠামো নির্মাণ এবং ৩২৭ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। পাঁচ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চার দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়কে ১৯৮টি দৃষ্টিনন্দন পোলে লাগানো হয়েছে ৩৫৬টি অত্যাধুনিক এলইডি বাতি। অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জ্বলবে ও নিভবে। সন্ধ্যায় যার আলোয় আলোকিত হলো চারপাশ। এতে অনন্য রূপ পেয়েছে রাতের মহানগরী।এর আগে, গত ২৯ ডিসেম্বর প্রথম পর্যায়ে আলিফ লাম মীম ভাটার মোড় থেকে নাদের হাজ্বীর মোড় পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার সড়কে ৮৭টি দৃষ্টিনন্দন পোলে ১৭৪টি অত্যাধুনিক এলইডি বাল্বের মধ্যে আলোকায়নের উদ্বোধন করা হয়। যাতে ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। তারও আগে মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতিতে আলোকায়ন করা হয়েছে। কাশিয়াডাঙ্গা মোড় থেকে বিলসিমলা রেলক্রসিং পর্যন্ত চার দশমিক দুই কিলোমিটার সড়কটিতে ১৭৪টি দৃষ্টিনন্দন পোলে বাসানো হয়েছে ৩৪৮টি আধুনিক এলইডি বাতি। বাতিগুলো প্রজাপতির মতো ডানা মেলে আছে।

মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ উপশহর মোড় থেকে দড়িখরবোনা, কাদিরগঞ্জ, মহিলা কলেজ, মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ি হয়ে সোনাদীঘি মোড় এবং মালোপাড়া মোড় থেকে রানীবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে মোট ৯৬টি ডেকোরেটিভ পোলে ৯৬টি দৃষ্টিনন্দন এলইডি সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন এ বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতিগুলো অটোলজিক কন্ট্রোলারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন-অফ হয়। এছাড়া সম্প্রতি বড়কুঠি থেকে পঞ্চবটি শ্মশান ঘাট পর্যন্ত পদ্মাপাড়ের ওয়াকওয়ে আলোকায়ন করা হয়েছে।

রোববার (২৭ মার্চ) রাত ৯টায় তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকায় সুইচ চেপে ও ফিতা কেটে এই আলোকায়নের উদ্বোধন করেন আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। উদ্বোধনের পর অনন্য রূপ পায় রাতের রাজশাহী। যেন সড়কে রাজকীয় আলোতে মুগ্ধ রাজশাহীবাসী। দেশের মধ্যে শুধুমাত্র রাজশাহীতে এই অত্যাধুনিক সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। তাইতো রাজশাহী পরিণত হয়েছে দেশসেরা আলোর মহানগরীতে।

আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে শুধুমাত্র রাজশাহীতে এমন দৃষ্টিনন্দন সড়কবাতি লাগানো হয়েছে। এই আলোকায়নে রাস্তায় নাগরিকদের চলাচল অনেক সাচ্ছন্দ্যের হচ্ছে, অন্যদিকে নিরাপত্তা বাড়ছে এবং সৌন্দর্যও বাড়ছে। আরও বড় সড়কগুলোতে এমন দৃষ্টিনন্দন আধুনিক সড়কবাতি লাগানো হবে। এভাবেই রাজশাহীকে আরও আধুনিক উন্নত, বাসযোগ্য ও সৌন্দর্যের মহানগর হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

ইউকে/এসই