পরকীয়া প্রেম ও আধিপাত্য বিস্তার নিয়েই যুবলীগ কর্মী জিয়াকে হত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর তানোর উপজেলার যুবলীগ কর্মী জিয়ারুল ইসলাম (৩৬) খুনের ঘটনায় পাঁচ জনকে ঢাকা ও কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পাঁচ জনের মধ্যে একজন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। মূলত এই ইউপি সদস্যের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক এবং আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই জিয়ারুলকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে র‌্যাবের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃত পাঁচ জন হলেন- রাজশাহীর তানোর উপজেলার লালপুর গ্রামের আবুল হাসান (৪২), একই গ্রামের হাকিম বাবু (৩৪), মো. সুফিয়ান (৩৬) এবং বিলশহর গ্রামের মো. শাহীন (২৫) ও মো. রাসেল (৩০)। তারা সবাই এজাহারভুক্ত আসামি। এদের মধ্যে আবুল হাসান তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য।

র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি)
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে- গতকাল বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে র‌্যাব-৫ এর রাজশাহীর মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের একটি দল রাজধানী ঢাকার মিরপুর থানা এলাকা থেকে হাকিম বাবু ও সুফিয়ানকে গ্রেপ্তার করে। এরপর র‌্যাব-৫ এর আরেকটি দল একই রাতে চট্টগ্রামের কক্সবাজারে অভিযান চালায়। এই অভিযানে অন্য তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদেরকে রাজশাহী নিয়ে আসা হয়।

র‌্যাব জানায়, কয়েক বছর আগে ইউপি সদস্য আবুল হাসান বিলশহর গ্রামের সুমি খাতুনকে বিয়ে করেন। এটি আবুল হাসানের দ্বিতীয় বিয়ে। এই বিয়ের আগে থেকেই সুমি খাতুনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল জিয়ারুল ইসলামের। বিষয়টি ইউপি সদস্য আবুল হাসান বুঝতে পেরে জিয়ারুলকে সতর্ক করেন।

এরপর এলাকায় গভীর নলকূপের অপারেটর নিয়োগ নিয়ে তাদের মধ্যে শত্রুতা আরও বেড়ে যায়। সম্প্রতি হাসানের কীটনাশকের দোকানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এর জন্য জিয়ারুলকেই সন্দেহ করছিলেন আবুল হাসান। এ নিয়ে মামলাও করেন হাসান।

এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে জিয়ারুলকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারী রাতে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ফেরার পথে জিয়ারুলকে কুপিয়ে খুন করা হয়।

এ ঘটনায় নিহত জিয়ারুলের ভাই রবিউল ইসলাম (২৪) বাদী হয়ে রাজশাহীর তানোর থানায় হত্যামামলা দায়ের করেছেন। ঢাকা ও কক্সবাজার থেকে এ মামলার এজাহারভুক্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করল র‌্যাব।

এই পাঁচজন র‌্যাবের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। পরে আজ বিকেলে তাদের তানোর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব।

এরআগে হত্যাকাণ্ডের পরদিনই পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরে আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সবমিলিয়ে এই পর্যন্ত জিয়ারুল হত্যা মামালায় নয়জন গ্রেপ্তার হলেন। মামলার এজাহারভুক্ত আরও ছয়জন আসামি এখনও পলাতক।

নিহত জিয়ারুল ইসলাম তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুণ্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানীর চাচাতো ভাই। গোলাম রাব্বানী এবার সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।

গ্রেপ্তার ইউপি সদস্য আবুল হাসান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী অনুসারী। জিয়ারুল খুনের পর গোলাম রাব্বানী দাবি করেন, নির্বাচনে জিয়ারুল তার পক্ষে ছিলেন বলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সমর্থকরা তাকে খুন করেছে।

ইউকে/এএস